ইউরোপে ফ্রি পড়াশোনা, ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপে আবেদন যেভাবে
Published: 2019-02-21 01:06:57 BdST, Updated: 2021-01-20 03:35:55 BdST
সাব্বির জুবাইর : বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা যে কয়টি মর্যাদাপূর্ণ স্কলারশিপ নিয়ে বাইরে মাস্টার্স করতে যান, ইরাসমাস মুন্ডাস মাস্টার্স স্কলারশিপ তার মধ্যে অন্যতম। সর্বশেষ শিক্ষাবছরে বাংলাদেশ থেকে ৫০ এর অধিক শিক্ষার্থী এই স্কলারশিপ নিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পড়াশোনা করছেন। এখন চলছে ইরাসমাস মুন্ডাস মাস্টার্স প্রোগ্রামগুলোর পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে ভর্তির আবেদন মওসুম। যেহেতু এই স্কলারশিপ যথেষ্ট প্রতিযোগিতাপূর্ণ, তাই এর জন্য প্রস্তুতি হওয়া চাই গোছানো এবং পর্যাপ্ত সময় নিয়ে।
এই প্রোগ্রামগুলো অনন্য এই কারণে, শিক্ষার্থীকে কমপক্ষে দুইটা ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হয়। সংখ্যাটা ৩, ৪ ও হতে পারে। এই প্রোগ্রামে একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের উপর সমান জোর দেওয়া হয় এবং সে লক্ষ্যে বিভিন্ন সেশন ও ওয়ার্কশপ পরিচালনা করা হয়। এছাড়া প্রোগ্রামের মধ্যেই সামার প্রোগ্রাম, শিক্ষা সফর, ইত্যাদি সাজানো থাকে। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবন যেন সহজ হয় সেজন্য কিছু প্রোগ্রাম তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করে। অনেক প্রোগ্রাম নতুন একটি ভাষা শেখার সুযোগ করে দেয়। এই প্রোগ্রামের নেতিবাচক দিক হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা কোথাও ভালো করে থিতু হতে না হতেই অন্য দেশে ছুটতে হয়। ফলে নতুন পরিবেশের সাথে দ্রুতই মানিয়ে নিতে না পারলে পড়াশুনার উপর বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
ইরাসমাস মুন্ডাস মাস্টার্স প্রোগ্রামের আওতায় শতাধিক মাস্টার্স প্রোগ্রাম রয়েছে। প্রোগ্রামের বিষয়গুলো খুবই বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং আধুনিক। কয়েকটা বিষয়ের নাম হলো : Big Data Management And Analytics, Documentary Filmdirecting, International Developmetn Studies, Public Policy।
এই লিঙ্ক থেকে সবগুলো প্রোগ্রামের তালিকা এবং আবেদন সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে : https://goo.gl/k4pN7J
যেসব সুবিধা রয়েছে : প্রতিটা প্রোগ্রামে ১০-২০ টা স্কলারশিপ দেওয়া হয়ে থাকে। স্কলারশিপের পুরো প্যাকেজ বেশ আকর্ষণীয়। প্রোগ্রাম চলাকালে যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করা হবে, তার টিউশন ফি সম্পূর্ণ মওকুফ। থাকা-খাওয়ার জন্য প্রতি মাসে ১০০০ ইউরো করে দেওয়া হবে। এছাড়া যাতায়াত এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক প্রয়োজনে অতিরিক্ত আরো ৭০০০ ইউরো দিবে। এছাড়া স্বাস্থ্য ও জীবন বীমার ব্যবস্থা থাকবে। এই স্কলারশিপ একজন শিক্ষার্থীর ইউরোপে স্বচ্ছন্দে পড়াশোনা করার জন্য যথেষ্ট।
প্রতিটা প্রোগ্রাম যে কতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় মিলে পরিচালনা করে, তার মধ্যে একটা 'হোস্ট বিশ্ববিদ্যালয়' থাকে যেটি আবেদন প্রক্রিয়া ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয় পরিচালনা করে। কোন প্রোগ্রামে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রামের ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়। প্রতিটা প্রোগ্রামে আবেদনের দরকারি কাগজপত্র আলাদা।
তবে সাধারণত এই কাগজপত্রগুলো প্রায় সব প্রোগ্রামই চেয়ে থাকে :
১. আন্ডারগ্রাজুয়েট সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট।
২. আইইএলটিএস স্কোর।
৩. স্টেটমেন্ট অব পারপাস।
৪. জীবন বৃত্তান্ত এবং রেফারেন্স লেটার।
৫. আইইএলটিস স্কোর কমপক্ষে ৬.৫ পেতে হয় এবং অনেক প্রোগ্রাম স্কোর দেরিতে পাঠানোর সুযোগ দেয়।
৬. কিছু প্রোগ্রাম প্রকাশিত কিংবা অপ্রকাশিত লেখালেখির নমুনা চাইতে পারে।
আবেদন করবেন যেভাবে : অাবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইনে। আবেদনকারি নিজে নিজেই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন। কোন আবেদন ফি নেই। একজন প্রার্থী কোন একটা নির্দিষ্ট বছরে সর্বোচ্চ তিনটা প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারেন। কিছু প্রোগ্রাম স্কাইপিতে ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য ডাকতে পারে। কিছু প্রোগ্রাম ইন্টারভিউ ছাড়াই কেবল আবেদনের কাগজপত্র মূল্যায়ন করেই চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করে। প্রোগ্রাম অনুসারে ডেডলাইন ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
যেহেতু ইরাসমাস মুন্ডাস মাস্টার্স স্কলারশিপ খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, তাই এটার জন্য দীর্ঘ সময় নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। প্রোগ্রামের ওয়েবসাইটে আবেদনকারীদের কোন পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করা হবে সেটা পরিষ্কার বলা থাকে। 'স্টেটমেন্ট অব পারপাস' এর উপর প্রায় সব প্রোগ্রামই জোর দিয়ে থাকে। কাগজপত্রগুলো সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রামের চাহিদা মোতাবেক সাজাতে হবে। চমৎকার লেখালেখি আপনাকে অন্য প্রতিযোগীদের থেকে এক কদম এগিয়ে রাখতে সাহায্য করবে। কোন নির্দিষ্ট প্রোগ্রামে আবেদন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত কোন প্রশ্ন থাকলে সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটরকে ইমেইল করতে হবে। ইরাসমাস মুন্ডাস মাস্টার্স স্কলারশিপের জন্য আবেদনকারি সবার জন্য শুভকামনা।
লেখক : সাব্বির জুবাইর
শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সিটি অব গ্লাসগো
ঢাকা, ২০ ফেব্রুয়ারি (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//সিএস