মক্কামুখী তীর্থযাত্রীরা যে পথে আসা যাওয়া করতো
Published: 2018-05-02 14:28:17 BdST, Updated: 2019-12-15 06:56:11 BdST

আনসার উদ্দীন খান পাঠান: তিম্বকতু । সাহারার দক্ষিণভাগে হাজার বছরের পুরনো মরুশহর। পশ্চিম আফ্রিকার সওদাগর আর মক্কামুখী তীর্থযাত্রীরা উটের কাফেলা নিয়ে আসা যাওয়ার পথে এইখানে বিরতি করতো। মুসাফিরদের জন্য ছিল অসংখ্য সরাইখানা ।কাছেই সাহারা মরুভুমির একমাত্র পানির আধার নাইজার নদীর ক্ষীণধারা।
পুরাকালে লবণ , স্বর্ণ, হাতির দাত আর ক্রীতদাসের রমরমা বাজার ছিল তিমবক্তু। বকতু নামের এক পরোপকারী রহস্য নারীর নামানুসারে গড়ে উঠে এই শহর। উত্তর আর পশ্চিম আফ্রিকায় ইসলাম প্রসারের যুগে এই প্রাচীন নগরটি হয়ে উঠে এই অঞ্চলের সর্ববৃহত ইসলামিক শিক্ষা আর গবেষণা কেন্দ্র। শহরের সবচে পুরনো মসজিদটি স্থাপিত হয় ৯৮৯ সনে।
পরে মসজিদ আঙিনাতেই ১৩০৭ সনে প্রতিষ্ঠিত হয় পশ্চিম আফ্রিকার প্রাচীনতম 'শংকরে মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়'।ইসলামি পন্ডিতদের পদচারণায় মুখরিত ছিল এই জনপদ। তিন শ ত্রিশ দরবেশের শহর বলেও তিমবক্তু পরিচিত। এর অধিকাংশ স্থাপনাই ইউনেস্কো ঘোষিত পুরাকীর্তির মর্যাদা পেয়েছে। প্রচুর পর্যটকের আনাগোণায় মুখরিত ছিল এ নগর। আলজেরিয়া বা লিবিয়া থেকে উঠের পিঠে চড়ে সাহারার বালিয়াড়ি পাড়ি দিয়ে সাহসী পর্যটকরা তিমবক্তু আসতো।
২০১২ সনে সব গৌরবের অবসান ঘটে। আফ্রিকান আল কায়েদা সমর্থিত জেহাদীরা দখল করে নেয় তিমবক্তুসহ উত্তর মালি । সালাফি মতের এই জেহাদীরা একে একে গুড়িয়ে দেয় মাজার আর প্রাচীন শিক্ষাকেন্দ্রের নিদর্শনগুলো , ধংশ করে জাদুঘরে রক্ষিত অনেক মূল্যবান প্রাচীন ম্যানুস্ক্রীপ্ট। ২০১৩ সনে ফ্রান্সের সহায়তায় মালি সরকার জেহাদীদের তাড়াতে সক্ষম হয়। এরপর এই শহরসহ পুরো রিজিওন রক্ষায় যোগ দেয় সতরটি দেশের সম্মিলিত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীরা। জাতিসংঘ আর পশ্চিমা দেশগুলোর সহায়তায় কিছু পুরা স্থাপনা মেরামত করা হয়েছে ।
মেরামত করা হয়েছিল গুড়িয়ে দেয়া তিমবক্তু বিমানবন্দরটিও। মালি নিরাপত্তাবাহিনী আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিশাল উপস্থিতি সত্বেও জেহাদীরা আবার স্বক্রিয় হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘ আর ফরাসী বাহিনীর উপর প্রায়শ চলছে চোরাগোপ্তা আর সুইসাইডাল আক্রমণ। গত ১৪ ই এপ্রিল আমরা আমাদের ক্যাম্পে যখন বাংলা নববর্ষ উদযাপন করছি তখনই খবর আসে শান্তিরক্ষীদের তিমবক্তু সুপার ক্যাম্প আর নিকটস্থ বিমানবন্দরে আত্মঘাতী গাড়িবোমা বিস্ফোরণের। শান্তিরক্ষীসহ নিহত হয় ১৬ জন।
মাত্র কদিন আগেই যে দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দরের সামনে আমি দাড়িয়ে ছবি তুলেছি তা আজ ধংশস্তুপ। শান্তি আরও দূরে সরে গেল । এই বিপদসংকুল মরুরাজ্যে শান্তিপ্রতিষ্ঠায় চেষ্টা তবু চলছে। পরশু রাতে মরুর বালিয়াড়িতে গলে পড়ছিল পূর্ণিমার উজ্জ্বল জোছনা ।
বুদ্ধ পূর্ণিমা। সেই স্নিগ্ধ আলোয় বসে বুদ্ধের শান্তির বাণীর কথা মনে করে বুকের কোণে আরেকটু শোক জমলো।
ঢাকা, ২ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এজেড