ববি লাইভ: প্রতিষ্ঠার একযুগ পার করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)। কিন্তু এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে কার্যকারী ভূমিকা রাখতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এমনটাই অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯ হাজারের অধিক। সম্প্রতি নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়ে একজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার মতো ঘৃণিত কাজে লিপ্ত হয়। এর জন্য সম্পর্কে অবনতি, পারাবারিক সমস্যা, মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি, হতাশা, পারিপার্শ্বিক চাপ ইত্যাদি অন্যতম প্রধান কারণ। গতবছর ২০২১সালে এক প্রতিবেদন উঠে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যা দ্বিগুন বৃদ্ধিয়ে পেয়েছে। ইতোমধ্যে ১০১জন শিক্ষার্থী মারা গেছে। গত দুই মাসে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিন্ন ভিন্ন বিভাগের ৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।
এদিকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী প্রেমিকার অন্যত্র বিয়ে ঠিক হওয়ায় আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। বিষয়টি জানতে পেরে অনেক চেষ্টায় তাকে জিবীত উদ্ধার করা হয়। উক্ত ঘটনার কিছু দিন পর গত ১০ মে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অষ্টম ভাগের শিক্ষার্থী রাফি আহমেদ খান ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। দ্রতই তার সাথে যোগাযোগ করে তাকে উদ্ধার করা হয়।
পরে তিনি জানান, আমি ডিপ্রেশনে আছি লেখাপড়া নিয়ে। আমার রেজাল্ট ভালো নয়। আমার সব দিক থেকেই খারাপ অবস্থা চলছে। আমি পড়াশোনাসহ সব বিষয়ে পিছিয়ে আছি। তাই আমি বাসায় বাবা-মার সাথে রাগারাগি করে ঘর থেকে বের হয়ে গিয়েছিলাম। তারপর ফেসবুকে রাগ হয়ে এই স্ট্যাটাস দিয়েছি।
এ বিষয়ে মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র রাকিব আহমেদ রাফি ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, গতকাল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন আত্মহত্যা করেছে। গতকাল রাতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী সুইসাইড করতে চেয়েছে মর্মে সংবাদ পাওয়া গেছে। এছাড়াও লাস্ট ৬ মাসের ডেটা এনাইলাইসিস করলে দেখা যাবে স্টুডেন্ট সুইসাইড ঘটেছে ১০ এর অধিক, এবং সুইসাইডাল মাইন্ডসেট নিয়ে চলাফেরা করছে শিক্ষার্থীদের একটা বড়সড় অংশ।
আমি মনে করি উক্ত সমস্যা সমাধানে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া (নারী ও পুরুষ উভয়) এবং একই সাথে যেহেতু প্রত্যেক শিক্ষকই শিক্ষার্থীদের সাথে রেগুলার ক্লাস কার্যক্রম পরিচালনা করেন তাই শিক্ষকতা শুরু পূর্বে অব্যশই মেন্টাল হেলথ এর একটি কোর্স করা অথবা শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেন্টাল হেলথ কোর্স তাদের জন্য বাধ্যতামূলক করা।
এ বিষয়ে বাংলা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নানা ধরণের মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। পরিস্থিতি সব সময় ভালো থাকে না। প্রেম এবং পারিবারিক ঝামেলা থেকেই এমন সিদ্ধান্তে অবনিত হয় শিক্ষার্থীরা। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে একজন সাইকোলোজিস্টের স্থায়ী নিয়োগের আহবান জানাই।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার মিলান ক্যাম্পাসলাইভ বলেন, আত্মহত্যা প্রবণতা রোধে মনোরোগ নিয়োগ অতি জরুরি। এখন যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করা উচিত। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে গুলোতে আত্নহত্যার প্রবণতা অনেক বেড়েছে। পারিবারিক, সামাজিক, ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা আরও অনেক কারণে ছেলে-মেয়েরা আত্নহত্যার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।তবে মনোরোগ নিয়োগের পাশাপাশি যেসব কারণে এই প্রবণতা বাড়ছে সেসব সমস্যা উত্তরণের পথ বের করতে হবে। কয়েকটি পরিসংখ্যানে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজট বৃদ্ধি, শিক্ষকদের মানসিক অত্যাচার, মানসিক প্রেশারসহ ব্যক্তিগতভাবে অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থতার কারণে আত্নহত্যার দিকে ঝোক বাড়ছে। সুতরাং প্রতিকারের থেকে প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষক শিক্ষার্থী বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গডে ওঠা উচিত। অল্পসংখ্যক শিক্ষক বাদে ববিতে এরকমটা দেখা যায় না। শিক্ষক শিক্ষার্থী সম্পর্ক ভালো হলে, সেশনজট দূর হলে শিক্ষার্থীরা আরও আত্নপ্রত্যয়ী হবে। সুতরাং এই দুই দিক বিবেচনায় নিলে অনেক ইতিবাচক ফলাফল আসবে আশা করি।
এ বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. খোরশেদ আলম ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, গতকাল বিষয়টি জানার পর এ নিয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের মানসিক উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মকান্ড হাতে নিয়েছি। এরই অংশ হিসাবে আগামীকাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মটিভেশনাল স্পিকার আসবে। এ বিষয়ে সেমিনারের আয়োজন করা হবে। সেমিনারে তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কথা বলবেন। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সাইকোলিজিষ্ট নিয়োগ দেওয়া দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। কিন্তু আমরাপবর্তীতে আমাদের এ ধরণের কার্যক্রম চলমান থাকবে। প্রত্যেক বিভাগের যারা এ ধরনের সমস্যাই ভুগছে তাদেরকে বাছাই করে কাউন্সিলিং দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, কোন শিক্ষার্থীর যেন অকালে প্রাণ না হারায় সেই লক্ষ্যে আজ ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের আয়োজনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাইকোলিজিস্ট আসবেন এবং সেমিনার নিবেন। প্রথমে আমরা প্রত্যেক বিভাগের ২ জন ক্লাস প্রতিনিধিদের এই কার্যক্রমের আওতায় আনবো। ছাত্র উপদেষ্ঠা শিক্ষকসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও চেয়ারম্যানরা উপস্থিত থাকবেন। শিক্ষার্থীরা যেন সঠিকভাবে পড়াশুনায় ফিরতে পারে সেজন্য বারবার আমাদের এ ধরনের সেমিনার কার্যক্রম চালু থাকবে। পাশাপাশি আমি শীঘ্রই ইউজিসি বরাবর চিঠি দিব একজন স্থায়ীভাবে সাইকোলোজিস্ট নিয়োগের জন্য।
ঢাকা, ০৭ জুন (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজে//এমজেড
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: