Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বুধবার, ৮ই মে ২০২৪, ২৫শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com
গবেষণায় জানা গেছে একবার হলেও

২৮ ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চিন্তা করেন

প্রকাশিত: ৮ জুন ২০২২, ২৩:৫৯

ফাইল ছবি

আজহার মাহমুদ: আত্মহত্যা। একটি শব্দ। একটি ভয়াবহ আতঙ্ক। জীবন থেকে সরে দাঁড়ানোর সহজ একটি পথ। যা সারা জীবনের কান্নার একটি উৎস। একটি পরিবার, সংসার কিংবা সমাজ- রাষ্ট্রে পচন ধরার মতো একটি বার্তা। যা জীবনের প্রতিটিক্ষণকে ধমড়ে-মুছড়ে শেষ করে দেয়। কিন্তু দু:চিন্তার কারণ হলো শিক্ষার্থীদের মাঝে এই প্রবনতা বাড়ছে। এটি আত্মমানসিক চাপ। হতাশা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, টুনকো প্রেম-ভালবাসা, অবসাদ ও হেনস্থার শিকার হয়ে শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। যা ধর্মীয় দিক থেকে খুবই গর্হিত কাজ। এ পাপ মোছনের কোন পথ নেই। অন্যরা কেন আত্মহত্যা করে সে বিষয়ে দৃষ্টি দেয়া যাক। আত্মহত্যার অনেক কারণ আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য, যৌতুকের কারনে ঝগড়া বিবাদ, পিতা-মাতা ও ছেলে-মেয়ের মধ্যে মনোমালিন্য, পরীক্ষায় ব্যর্থতা, দীর্ঘস্থায়ী রোগ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া, প্রেম-বিরহ, মিথ্যা অভিনয়ের ফাঁদে পড়ে, ব্যবসায় বারে বারে ব্যর্থ হওয়া, শক্রর কাছে ধরা না দেয়া ইত্যাদি, মানসিক আশান্তির কারনে এই ভয়ঙ্কর পথে যাত্রা করেন অনেকেই।

বিবিএস-এর জরিপ বলছে বাংলাদেশে বছরে আত্মহত্যা করছেন প্রায় ১৩ হাজার মানুষ ৷ গড়ে প্রতিদিন মারা যাচ্ছেন ৩৫ জন ৷ পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাবে বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ১০ হাজার মানুষ শুধু বিভিন্ন কায়দায় আত্মহত্যা করেন ৷ ইদানিং ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে আত্মহত্যার প্রচার অন্যদের প্রভাবিত করছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তথ্যমতে, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের ৩১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় আত্মহত্যাজনিত অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে দুই হাজার ১৬৬টি ৷ এদিকে বিগত ৫০ বছরে সারা পৃথিবীতে, মূলত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আত্মহত্যার হার শতকরা ৬০ শতাংশ বেড়েছে। সারা পৃথিবীর যত মানুষ আত্মহত্যার মাধ্যমে মৃত্যুবরণ করে, তার মধ্যে ২.০৬ শতাংশ বাংলাদেশি। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রতি লাখে ১২৮.০৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করে। প্রতিবছর এই সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। বাংলাদেশে প্রতিদিন ২৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করছে বলে বিভিন্ন শুমারী থেকে জানা যায়।

আত্মহত্যা বা সুইসাইডের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বিখ্যাত লোকদের মধ্যেও আছে। কিংবদন্তীর মধ্যে আছে, আছে রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবীদের মাঝে। সুইসাইড বুড়োদের মধ্যে যেমন আছে তেমন আছে তরুণদের মধ্যে। বিবাহিত-অবিবাহিত, প্রেমিক-প্রেমিকা, চোর-সাধুরাই নন অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিরাও এ অভিশপ্ত পথ বেছে নিয়েছেন। অর্থাৎ, নায়ক-খলনায়ক, বিজ্ঞানীসহ নানা অভিজাত শ্রেণিও সুইসাইড করেছেন। তাদের মধ্যে ক্লিওপেট্রা, নিরো, এডলফ হিটলার, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, ক্রিস বেনওয়েট, ভিনসেন্ট ভ্যন গফ এবং ষাট দশকের গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দেয়া সুন্দরী অভিনেত্রী মেরিলিন মনরো'র নাম উল্লেখযোগ্য।

এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ইমাম হোসেনের আত্মহত্যা

সংশ্লিস্টরা বলছেন, বাংলাদেশে কীটনাশক পান, ইঁদুর মারার বিষপান, ফাঁসি, ঘুম বা ব্যথার ওষুধ, হারপিক, স্যাভলন ইত্যাদি বিষাক্ত তরল পান করার মাধ্যমে মানুষ আত্মহত্যা করে থাকে। অল্পবয়সী ছেলে-মেয়েদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি দেখা যায়। আত্মহত্যার ধরনেও রয়েছে বৈচিত্র্য। কেউ নিজেই নিজের জীবন নিয়ে নেয়। আবার কেউ এক বা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে চুক্তি করে একসঙ্গে আত্মহত্যা করে। একে বলে প্যাক্ট সুইসাইড। কখনো কখনো দলের চাপে অনেকে একসঙ্গে আত্মহত্যা করে। একে বলে ম্যাস সুইসাইড।

এদিকে দেশের ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর চালানো এক গবেষণায় উঠে এসেছে প্রায় ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী চরম দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। আর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থীর মাথায় জীবনের কোনো না কোনো সময় আত্মহত্যার চিন্তা এসেছে। সম্প্রতি গবেষণাটি ‘মোটিভেশনস অ্যান্ড ব্যারিয়ারস ফর ক্লিনিক্যাল মেন্টাল হেলথ-সিকিং ইন বাংলাদেশি ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস’ নামে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেসে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণা কর্মটি পরিচালনা করেছেন ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ সায়েন্স সেন্টারের পোস্ট-ডক্টরাল রির্সাচ ফেলো মুনজিরিন এস সিফাত, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাইমা তাসনিম, পেনসিলভেনিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নুসরাত হকসহ মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব পাবলিক হেলথের কয়েকজন গবেষক।

গবেষণার ফলাফলে উঠে আসে শিক্ষার্থীদের ৭০ শতাংশ মানসিক স্বাস্থ্যে সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন। ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থী মানসিক সমস্যায় ক্লিনিক্যাল সহায়তাকে ইতিবাচক বলে দেখেন। যাদের ৭ শতাংশ ক্লিনিক্যাল সহায়তা নিয়েছেন। যেখানে শিক্ষার্থীদের ১০ শতাংশ মানসিক সমস্যা সমাধানে যান্ত্রিক ও আচরণগত বাধা অনুভব করেছেন। এ ছাড়া ৭৮ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী কমপক্ষে অপর একজনের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে আলাপ করেছেন। গবেষণায় আরও উঠে আসে, ২৪ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সহযোগিতার প্রয়োজন নেই। ক্লিনিক্যাল সমাধানের বাইরেও শিক্ষার্থীরা মানসিক সমস্যা সমাধানে আত্মপরিচর্যা, নেতিবাচক চিন্তাভাবনা বাদ দেওয়া, লম্বা শ্বাস নেওয়া, গভীর ধ্যান করা প্রভৃতি কাজ চালিয়েছিলেন।

গবেষণায় বলা হয়, ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীদের একটা বড় অংশ মানসিক স্বাস্থ্যে সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। এ ছাড়া বিদ্যমান কুসংস্কারের কারণে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানে ক্লিনিক্যাল সহায়তার বিষয়ে শিক্ষার্থীরা এখনো খুব একটা আগ্রহী নয় বলে দাবি করা হয় এ গবেষণায়। ২০২০ সালের জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনলাইনে একটি জরিপ চালানো হয়। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৩৫০ শিক্ষার্থীর দেওয়া তথ্যকে চূড়ান্ত করে ডেটাসেট তৈরি করা হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন জান্নাতুল মাওয়া দিশা

তথ্যদাতাদের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৬৩ শতাংশ। যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অংশগ্রহণকারী ৫ শতাংশের নিচে। অংশগ্রহণকারীদের ৫৭ শতাংশ পুরুষ এবং প্রায় ৪২ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী। যাদের ৮৩ দশমিক ৪ শতাংশ স্নাতক পর্যায়ের। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৭৬ দশমিক ৩ শতাংশ নিজেদের প্রেমের সম্পর্ক বহির্ভূত (সিঙ্গেল) বলে দাবি করেছেন। এ ছাড়া তথ্য দেওয়াদের ৭৩ শতাংশ সচ্ছল পরিবারের সন্তান বলে জরিপে উঠে আসে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ইংল্যান্ডের কিংস কলেজ অব লন্ডনের ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব সোশ্যাল সাইকিয়াট্রি’তে প্রকাশিত অপর এক গবেষণা নিবন্ধে আত্মহত্যার কারণ হিসেবে প্রেমঘটিত ব্যাপার, অতি আবেগপ্রবণতা, স্বপ্নপূরণে ব্যর্থতা, পারিবারিক কলহ, শিক্ষাজীবনে অসফলতা, যৌন নির্যাতন ও মানসিক ভারসাম্যহীনতাকে দায়ী করা হয়।
গবেষকেরা মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষণীয় প্রচারণার বিষয়ে তাগিদ দেন।

এ ছাড়া গবেষকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখতে, শিক্ষার্থীদের এ ধরনের সমস্যা থাকলে যেন দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারে সেজন্য খোলামেলা আলোচনার ব্যবস্থা করা এবং বিশেষ এই সেবাটি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেওয়ারও পরামর্শ দেন।

আত্মহত্যার ইতিহাস:

প্রাচীন এথেন্সে যদি কোন ব্যক্তি রাষ্ট্রের অনুমোদন ব্যতিরেকে আত্মহত্যা করত তাহলে তাকে সাধারণ কবরস্থানের সম্মান দেয়াকে অস্বীকার করা হত। তাকে কবরস্থ করা হত শহরের বাইরে অবস্থিত কোন জায়গায় একা। শুধু তাই নয় তার জন্য কোন স্মৃতিফলক ও ব্যবহার করতে দেয়া হতনা । তবে সামরিক পরাজয়ের মোকাবেলা করার জন্য এটি গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি বলে মনে করা হতো। প্রাচীন রোমে আত্মহত্যা প্রাথমিকভাবে অনুমোদিত ছিল, পরে এটি অর্থনৈতিক খরচের কারণে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটি অপরাধ বলে অভিহিত হয়েছিল।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন আবিদ বিন আজাদ

প্লেটোর দ্বিধাবিভক্ত অবস্থায় প্রেক্ষাপটে অ্যারিস্টটল আত্মহত্যার সব ধরনের পন্থার নিন্দা জানিয়েছিলেন। রোমে কিছু আত্মহত্যার কারণ যেমন- গ্ল্যাডিয়েটর যুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবক মৃত্যু, অন্যের জীবন বাঁচাতে, অন্যের জীবন রক্ষা করার জন্য, শোকের ফলে, ধর্ষণের জন্য লজ্জা থেকে মুক্তি পেতে, শারীরিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি, সামরিক পরাজয়ের মতো অসহিষ্ণু পরিস্থিতিতি থেকে অব্যাহতি বা অপরাধমূলক সাধনা সাধারণ বিষয় ছিল। আত্মহত্যাকে ইসলাম ধর্ম গুরুতর পাপ বলে আখ্যা দিয়েছে। তাছাড়া খ্রিস্টান ধর্ম এটিকে পাপ হিসাবে গণ্য করেছিল এবং ৪৫২ সালে Arles এর কাউন্সিলে তাকে শয়তানের কাজ হিসেবে নিন্দা করা হয়েছিল । মধ্যযুগে চার্চ করডোবার শহীদদের ক্ষেত্রে যেমন শহীদ হওয়ার বাসনা আত্মঘাতী ছিল তাই তাকে আলোচ্য আলোচনার বাইরে রাখা হয়েছিল। এই বিরোধ এবং মাঝে মাঝে সরকারি বিধিবিধান সত্ত্বেও সপ্তদশ শতকের শেষের দিক পর্যন্ত আত্মহত্যার বিষয়ে ক্যাথলিক মতবাদ পুরোপুরি নিষ্পত্তি হয়নি।

ফ্রান্সের লুই চতুর্দশ এর ১৬৭০ সালে জারি করা ফৌজদারি অধ্যাদেশটি অত্যন্ত খারাপ ছিল, এমনকি সময়ের জন্যও: মৃত ব্যক্তির শরীরটি রাস্তায় টেনে আনা হত, মাথা নিচু করে তারপর আবর্জনা দিয়ে আবৃত করা হত। উপরন্তু, ব্যক্তির সমস্ত সম্পত্তি জব্দ করা হত। রেনেসাঁর সময় থেকে আত্মহত্যার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ধীরে ধীরে পরিবর্তন শুরু হয়েছিল। জন ডন এর কাজ 'বাইথানটোস' আত্মহত্যার প্রথম আধুনিক সুরক্ষার মধ্যে একটি ছিল, যিশু, শিমসন এবং শুলের মতো বাইবেলের পরিচয়ের আচার থেকে সাক্ষী এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে আত্মহত্যার অনুমোদনের জন্য যুক্তি ও প্রকৃতির ভিত্তিতে আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করেছিল ।

এই জঘন্য মানসিক রোগের অর্থাৎ আত্মহত্যার নানান কারণ রয়েছে। এসব কারণ গুলো ধারাবাহিকভাবে আলোকপাত করা যাক।

মানসিক ভারসাম্যহীনতা:

প্রায় ২৭% থেকে ৯০% এরও বেশি সময় আত্মহত্যার সাথে মানসিক অসুখের সম্পর্ক থাকে। এশিয়াতে, মানসিক রোগের হার পশ্চিমা দেশের চেয়ে অনেক কম । যাদেরকে সাইকিয়াট্রিক ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে তাদের পূর্ণ আত্মহত্যার ঝুঁকি রয়েছে ৮.৬%। আত্মহত্যার মাধ্যমে মারা যায় তাদের প্রায় অর্ধেকের মধ্যে জটিল ডিপ্রেশন থাকতে পারে; এই বা অন্য কোনও মানসিক রোগ যেমন বাইপোলার ডিসঅর্ডার আত্মহত্যার জন্য ২০ গুণের বেশি ঝুঁকি বাড়ায়। অন্যান্য অবস্থার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত সিজোফ্রেনিয়া (১৪%), ব্যক্তিত্বের রোগ (৮%), দ্বিপক্ষীয় ব্যাধি, মোটা হওয়া জনিত ব্যাধি, এবং ট্রোমাউত্তর স্ট্রেস ডিসঅর্ডার।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন সাদিয়া তাবাস্সুম

অন্যরা অনুমান করে যে প্রায় অর্ধেক যারা আত্মহত্যা করে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে একটি স্বতন্ত্র রোগের আবির্ভাব ঘটতে পারে যাকে সীমানাগ্রাহ্য ব্যক্তিত্বের ব্যাধি হিসাবে দেখা হয়। সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৫% মানুষ আত্মহত্যা করেন। ঝুঁকির পরিমাণ বেশি থাকে এমন রোগ হল অতিরিক্ত খাওয়া জনিত রোগ। প্রায় ৮০% আত্মহত্যা করেছেন যারা মৃত্যুর আগে এক বছরের মধ্যে ডাক্তার দেখিয়েছেন, এবং যারা আগের মাসে ডাক্তার দেখিয়েছেন তাদের প্রায় ৪৫% আত্মহত্যা করেছেন । যারা আত্মহত্যা করেছিলেন তাদের প্রায় ২৫-৪০% আগের বছর মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলির সাথে যোগাযোগ করেছিল। SSRI টাইপের এন্টিডিপ্রেসেন্ট শিশুদের মধ্যে আত্মহত্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে কিন্তু প্রাপ্তবয়স্কদের ঝুঁকি পরিবর্তন করে না।

নেশা ও ড্রাগ আসক্তি:

ড্রাগের অপব্যবহার এবং তীব্র নেশা পারস্পরিকভাবে সম্পর্কযুক্ত। যখন ব্যক্তিগত দুঃখ পায়, তখন নেশার আশ্রয় নেয়, কিন্ত আর বেরিয়ে আসতে পারে না। বেশিরভাগ মানুষ সিডেটিভ হিপনেটিপ ড্রাগ (যেমন অ্যালকোহল বা বেনজোডিয়েজপাইন) এর প্রভাবের অধীনে যখন তারা আত্মহত্যার মাধ্যমে মারা যায় তখন ১৫% এবং ৬১% ক্ষেত্রে মদ্যপানের সাথে উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় । নির্ধারিত বেনজোডিয়েজপাইনের ব্যবহার আত্মহত্যার চেষ্টা এবং পূর্ণ আত্মহত্যার হারের সাথে জড়িত। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা প্রত্যাহারের উপসর্গ দ্বারা সৃষ্ট মানসিক ব্যাঘাত হওয়ার কারণে বেনজোডিয়েজপাইনের প্রাদুর্ভাবের প্রভাবগুলি সন্দেহজনক। যেসব দেশে বেশী পরিমাণে অ্যালকোহল ব্যবহার করে এবং বারের ঘনত্ব বেশি সেখানে সাধারণত আত্মহত্যার হার অনেক বেশি হয়ে থাকে। ২.২-৩.৪% ব্যক্তি যাদেরকে মদ্যপানের জন্য চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল তাদের আত্মহত্যার মাধ্যমে মৃত্যু হয়েছে । মদ্যপায়ী যারা আত্মহত্যার চেষ্টা করে তারা সাধারণত পুরুষ, বয়স্ক, এবং অতীতে তারা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল । যারা হেরোইন ব্যবহার করে তাদের মধ্যে ৩ এবং ৩৫% আত্মহত্যার মধ্যমে মৃত্যু ( যারা ব্যবহার না করে তাদের তুলনায় প্রায় ১৪ গুন বেশি) হয়। বয়ঃসন্ধিকালীন বয়স্কদের মধ্যে যারা অ্যালকোহলের অপব্যবহার করে স্নায়বিক ও মানসিক ব্যাধি তাদের আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

কোকেন এবং মেথামফেটামিনের অপব্যবহার আত্মহত্যার সঙ্গে উচ্চতর সম্পর্ক রয়েছে। যারা কোকেন ব্যবহার করে তাদের প্রত্যাহার পর্যায়ে ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে । যারা ইনহেলার ব্যবহার করেন তারাও প্রায় ২0% আত্মহত্যার চেষ্টা করে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তার মাত্রা ৬৫% এর বেশি মনে করা হয়। ধূমপান আত্মহত্যার ঝুঁকির সাথে সম্পর্কিত। কেন এই সমিতি বিদ্যমান তার সামান্য কোন প্রমাণ নেই; তবে এটা অনুমান করা হয়েছে যে, যারা ধূমপান করতে পছন্দ করে তাদেরও আত্মহত্যার প্রবণতা রয়েছে, ধূমপানের ফলে যে স্বাস্থ্যগত সমস্যাগুলি ঘটে তা মানুষকে তাদের জীবন শেষ করতে অনুপ্রাণিত করে এবং ধূমপান মস্তিষ্কে আত্মহত্যার প্রবণতা সৃষ্টি করে। তবে গাঁজা ব্যবহার স্বতন্ত্রভাবে ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে দেখা যায় না।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশলাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলেন তানভীর

জুয়া খেলা:

সমস্যা মাথায় নিয়ে জুয়া খেলা হচ্ছে। সাধারণ জনসংখ্যার তুলনায় আত্মঘাতী চিন্তাভাবনা চলে । ১২ থেকে ২৪% রোগগত জুয়াড়ি আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তাদের স্বামী/স্ত্রীর মধ্যে আত্মহত্যার হার সাধারণ জনসংখ্যার তুলনায় তিন গুণ বেশি। সমস্যাযুক্ত জুয়াগারের ঝুঁকি বাড়ানোর অন্য কারণগুলি হলও মানসিক অসুস্থতা, অ্যালকোহল এবং মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার।

অসুস্থতা:

আত্মহত্যাপ্রবণতা এবং শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে, যেমন-দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, মস্তিষ্কের আঘাত, ক্যান্সার, কিডনি ব্যর্থতা (হেমোডায়ালাইসিস প্রয়োজন), এইচআইভি, এবং সিস্টেমেটিক লেপাস এ্যারিথেমাসটুসাস । ক্যান্সার নির্ণয়ের পরে প্রায় আত্মহত্যার পরবর্তী ঝুঁকি দ্বিগুণ। বিষণ্ণতা এবং মদ অপব্যবহারের জন্য সামঞ্জস্য বজায় রাখার ফলে আত্মহত্যা প্রবণতা বেড়ে যায় । একাধিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে তাদের ঝুঁকি বিশেষত বেশি ছিল। জাপানে স্বাস্থ্যগত সমস্যাগুলিকে আত্মহত্যার প্রাথমিক যুক্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়।

ঘুমের সমস্যা যেমন ইনসমনিয়া এবং ঘুম অ্যাপেনিয়া হতাশা এবং আত্মহত্যার ঝুঁকির কারণ হিসাবে মনে । কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঘুমের সমস্যা বিষণ্ণতা সংক্রান্ত ঝুঁকির কারণ হতে পারে। অন্যান্য বেশ কয়েকটি মেডিক্যাল অবস্থা মস্তিষ্কের রোগের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যেমন মানসিক অস্বাভাবিকতা , হাইপোথাইরয়েডিজম, আলজাইমার, মস্তিষ্ক টিউমার, সিস্টেমেটিক লেপাস ইরিথেমাটোসাস এবং অনেকগুলি ঔষধ থেকে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে (যেমন বিটা ব্লকার এবং স্টেরয়েড) ।

মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা:

মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়ায়। যেমন-হতাশা, জীবনের আনন্দ হারিয়ে ফেলা, বিষণ্ণতা এবং উদ্বিগ্নতা। সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতা কমে যাওয়া, ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া যা আগে ছিল এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতা ও ভূমিকা পালন করে। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অন্যদের বোঝা হওয়ার অনুভূতি গুরুত্বপূর্ণ। আত্মহত্যা যার কারণটি হল যে ব্যক্তি মনে করে যে সে সমাজের অংশ নয় তা মূলত অহংকারী আত্মহত্যা বলে পরিচিত। ক্রিসমাসের সময় আত্মহত্যার হার কমে যায়। তবে এক গবেষণায় পাওয়া গেছে যে পুরুষদের জন্মদিনে এর ঝুঁকি বেশি হতে পারে।

সাম্প্রতিক জীবনের চাপ যেমন-পরিবারের সদস্য বা বন্ধুকে হারানো, চাকরির ক্ষতি বা সামাজিক বিচ্ছিন্নতা (যেমন একা বেঁচে থাকা) আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। যারা বিয়ে করেনি তারাও আরও ঝুঁকিপূর্ণ। ধার্মিক হওয়ার ফলে আত্মহত্যার ঝুঁকি কমে যায়। এটি ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানের কারণে হয়েছে যা অনেক ধর্ম আত্মহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়ায় এবং অধিকতর যৌক্তিকতা ধর্ম দিতে পারে। মুসলমানদের মধ্যে যারা ধার্মিক তাদের মধ্যে আত্মহত্যার নিম্ন হার আছে বলে তথ্য মিলেছে। তবে এই সমর্থনকারী তথ্য অনেক শক্তিশালী। আত্মহত্যার চেষ্টার হারের মধ্যে কোন পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় না।

প্রহসন বা কুসংস্কার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কেউ কেউ নিজের জীবন নিতে পারে। শৈশবের যৌন নির্যাতন এবং সৎ পিতামাতার যত্নে লালিত পালিত হওয়ার ফলেও আত্মহত্যার ঝুঁকি বেড়ে যায় । যৌন নিপীড়ন সামগ্রিক ঝুঁকির মধ্যে প্রায় ২০% অবদান রাখে বলে বিশ্বাস করা হয়। আত্মহত্যার একটি বিবর্তনমূলক ব্যাখ্যা হচ্ছে এটি অন্তর্ভুক্তিকৃত ফিটনেস উন্নত করতে পারে। এটি ঘটতে পারে যদি আত্মহত্যার কারণে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির কোন সন্তান না থাকে এবং জীবিত থাকার কারণে আত্মীয়দের কাছ থেকে সম্পদ সংগ্রহ করতে হয়। একটি আপত্তি হল বয়ঃসন্ধিকালের মৃত্যু সম্ভবত অন্তর্ভুক্তিকৃত ফিটনেস বৃদ্ধি করে না। পূর্বপুরুষদের ক্ষেত্রে সংগঠিত অভিযোজন বর্তমানে অপ্রত্যাশিত হতে পারে।

দারিদ্র্য আত্মহত্যার ঝুঁকির সাথে সম্পর্কিত। আপেক্ষিক দরিদ্রতা বৃদ্ধি একজন ব্যক্তির চারপাশে আত্মহত্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। ভারতে ২০০,০০০-এরও বেশি কৃষক আত্মহত্যার কারণে মৃত্যুবরণ করে। চীনে আত্মহত্যা নগরের চেয়ে গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে আত্মহত্যার হার তিন গুণ বেশি, দেশটির এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক সমস্যাকেই এর কারণ হিসাবে বিশ্বাস করা হয়।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন কাজল মন্ডল

মিডিয়ার প্রভাব:

মিডিয়া। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। যার মধ্যে রয়েছে ইন্টারনেট। এগুলো আত্মহত্যার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আত্মহত্যার বিবরণটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে তখন যখন তার সাথে উচ্চ-ভলিউম, পুনরাবৃত্তিমূলক কভারেজ, আত্মহত্যার প্রশংসা করে বা রোমান্টিকাইজ করা হয়। যখন একটি নির্দিষ্ট উপায়ে কী করে নিজেকে হত্যা করা যায় তার বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়, আত্মহত্যার এই পদ্ধতি সমগ্র জনসংখ্যার মধ্যে বৃদ্ধি পেতে পারে। আত্মহত্যা ছোঁয়াচে বা প্রতারণা আত্মহত্যার এই ট্রিগারটি ওয়ারথার প্রভাব নামে পরিচিত, জিওথ এর দ্য সরো অব ইয়ার ওয়ারথার চরিত্রটির নামকরণ করেন, যিনি নিজেকে হত্যা করেছিলেন এবং বইটিকে অনেক প্রশংসা করার সাথে সাথে অনুকরণ করা হয়েছিল।

এই ঝুঁকিগুলি কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বেশি, যারা মৃত্যুকে রোমান্টিকাইজ করাতে পারে। সংবাদের মাধ্যমে যখন এটি প্রদর্শিত হয় তখন এর একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে; অনেকটা বিনোদন মিডিয়ার সমতুল্য বলা যায়। Werther এর প্রভাবকে প্রস্তাবিত পাপাজেনো প্রভাব বলা হয়, কার্যকর কড়া প্রক্রিয়া কভারেজ যেখানে একটি প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব থাকতে পারে। শব্দটি মোজার্টের অপেরা দ্য ম্যাজিক ফ্লোট একটি চরিত্রের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, যিনি (একজন পছন্দনীয় ব্যক্তির ক্ষতির আশঙ্কা করছেন) নিজেকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিলেন যতক্ষণ পর্যন্ত না তার বন্ধুরা তাকে সাহায্য করে। যদি মিডিয়া অনুমোদিত পরামর্শ অনুযায়ী রিপোর্ট করে তখন আত্মহত্যার ঝুঁকি কমে যেতে পারে। শিল্প থেকে ক্রয়-বিক্রয় করা কঠিন হতে পারে, বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পের জন্য।

আত্মহত্যায় উৎসাহীকে সহায়তা:

আত্মহত্যাকারীকে সাহায্য করা প্রযোজন। প্রত্যেকটি আত্মহত্যাকারী লোকের জন্য একই ধরনের থেরাপি চিকিৎসা উপযুক্ত নয়। আত্মহত্যার সাথে সবেচেয়ে বেশি অন্য রোগ জড়িত থাকলে তার চিকিৎসা হয় ওষুধ দ্বারা, কথার থেরাপি অথবা দুটোর সমন্বয়ে। কগনেটিভ এবং বিহেভিয়ারাল থেরাপির উদ্দেশ্য রোগীর আশাশূন্যতাকে দূর করা, তাদের প্রতিকার দেখিয়ে দেয়ার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা এবং তাদের নিজেদের জন্য নতুন পথে চিন্তা-ভাবনা করতে শিখিয়ে দেয়া। বিহেভিয়ারাল মেথড যেমন নিশ্চয়তার বিষয়ে প্রশিক্ষণ, সমস্যার সমাধান, সামাজিক নৈপুণ্য শিখিয়ে দেয়া এবং পেশির শিথিলতা ডিপ্রেশন কমাতে পারে, কমাতে পারে দুশ্চিন্তা এবং সামাজিক অনুপযুক্ততা। বুদ্ধিবৃত্তিক ও আচরণগত বাড়ির কাজের পরিকল্পনায় রোগীকে সাথে নিলে এবং পরীক্ষামূলকভাবে তার কাছে সব ব্যাখ্যা করে বললে পরিকল্পনাটা যদি ব্যর্থও হয়ে যায় তা হবে অনেক শিক্ষণীয়।

জায়না হাবিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন

থেরাপিস্টরা জোর দেয় যে, রোগী বেশির ভাগ কাজ নিজে করবে, কারণ এটা বিশেষভাবে জরুরি আত্মহত্যায় মগ্ন ব্যক্তি থেরাপিস্টকে এমনভাবে দেখবেন না যে সে তার বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয়। আধুনিক গবেষণায় অধিক শক্তিশালীভাবে সমর্থন দেয়া হয়েছে যে, ডিপ্রেশনের সাথে আত্মহত্যার ঝুঁকি জড়িত রোগীদের জন্য ওষুধের ব্যবহার প্রয়োজন। অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধে মেজাজের সাথে সম্পৃক্ত মস্তিষক থেকে ক্ষরিত রসায়নের ওপর ভালো কাজ করে। অনেক ধরনের কার্যকরী অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ এখন পাওয়া যায়। অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধে কোনো অভ্যাস গঠন করে না। যদিও কিছু লক্ষণ যেমন ইনসমনিয়া প্রায়ই বেড়ে যায় এক বা দু সপ্তাহের মধ্যে। আপনার ভালো অনুভব করার জন্য সময় লাগতে পারে তিন বা চার সপ্তাহ। পূর্ণ মাত্রার ওষুধের সুফল পাওয়ার জন্য লাগতে পারে ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের চিকিৎসা।

অনেক সময় ওষুধের মাত্রা পরিবর্তন করা লাগতে পারে অথবা ওষুধের শ্রেণী বদল করা লাগতে পারে যতক্ষণ পর্যন্ত উন্নতি লক্ষ্য করা না যায়। এটা সাধারণত পরামর্শ দেয়া হয় যে, ওষুধ সেবন করতে হবে ডিপ্রেশনের লক্ষণ চলে যাওয়ার পরও কমপক্ষে ৪ থেকে ৯ মাস পর্যন্ত। যেসব লোকের ক্রনিক ডিপ্রেশন আছে তাদের ভবিষ্যতে আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য ওষুধের ওপর থাকার প্রয়োজন হতে পারে। যেসব লোক অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট সেবন করে তাদের একজন ডাক্তার কর্তৃক উপদেশ দান করতে হবে যিনি ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন সম্বন্ধে ভালো জানেন, যাতে অনেক কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে সর্বোৎকৃষ্ট চিকিৎসা দেয়া যায়। এটা আরো জরুরি যে, রোগী অন্যান্য যে ওষুধ সেবন করেছে সে সম্বন্ধে আপনার ডাক্তারকে অবহিত করতে হবে। তার মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এবং গাছ-গাছড়ার ওষুধ, যাতে ভয়াবহ মিথষিক্রয়ার হাত থেকে বাঁচা যায়। মদ অথবা অন্য ড্রাগ অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধের সাথে নেতিবাচকভাবে মিথষিক্রয়া করতে পারে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, যদি এই সময়ে আলোচিত আবু মহসিন খানের আত্মহত্যার বিষয়টি বিশ্লেষণ করা যায় তাহলে দেখা যাবে হঠাৎ করে নয়, তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ৷ তার মৃত্যুর পর মানুষ কীভাবে ঘরে ঢুকবে তার ব্যবস্থাও তিনি করে রেখেছিলেন ৷ এটা একাকীত্ব থেকে গভীর বিষন্নতার ফল ৷ তিনি বলেন, ‘‘আবার ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে আত্মহত্যার একটি ঘটনা যখন প্রচার পায় তখন অন্যদের প্রভাবিত করে ৷ আত্মহত্যার কারণ বিশ্লেষণ করে যদি পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয় তাহলে আরেকজন আত্মহত্যার যুক্তি খুঁজে পায় ৷ তাই আমাদের সবার সতর্ক হওয়া প্রয়োজন ৷’’দেশের স্বার্থে, দশের স্বার্থে এ ব্যাপারে সকলকেই যত্নশীল হতে হবে। তিনি আরো বলেন ইদানিং কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এই ভয়ঙ্কর পথটি বেছে নিচ্ছে। যা রীতিমত ভয়ের কারণ। এখনই এই ভয়াবহতার লাগাম টেনে ধরতে হবে। অন্যথায় এর খেশারত দিতে হবে গোটা জাতিকে।

ঢাকা, ০৮ জুন (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিআইটি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ