Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | মঙ্গলবার, ১৯শে মার্চ ২০২৪, ৫ই চৈত্র ১৪৩০
teletalk.com.bd
thecitybank.com
রেলওয়ের অনিয়ম,দুর্নীতির প্রতিবাদকারী

ঢাবির সেই রনি এখন চা বিক্রেতা!

প্রকাশিত: ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, ২০:৪১

ঢাবির সেই রনি এখন চা বিক্রেতা!

ঢাবি লাইভ: বাংলাদেশ রেলওয়ের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে আন্দোলন করে দেশব্যাপী আলোচনায় আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। এছাড়া ঢাবি মেডিকেল সেন্টারের আধুনিকায়নসহ ছয় দফা দাবিতে অনশন কর্মসূচি পালন করেও ক্যাম্পাসে পরিচিতি পান তিনি।

তবে এবার আর কোনো প্রতিবাদ নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী শুরু করেছেন নতুন এক কর্মসূচি। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তিনি এখন ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করছেন। রনি বলছেন, এটি আত্মশুদ্ধির আন্দোলন এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধির উপায়।

রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির ডাস চত্বরে ‘এখানে চা মূল্যে চিন্তা ক্রয়-বিক্রয় করা হয়’ প্ল্যাকার্ড নিয়ে চা বিক্রি করতে দেখা যায় মহিউদ্দিন রনিকে।

রনি বলেন, শুরুটা করেছিলাম মূলত প্রয়োজন থেকে। আপনারা জানেন, আন্দোলনের পর আমি বেশ অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং অনেক টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ি। এসময় অনেকে এগিয়ে আসতে চান এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিতে চান। কিন্তু দেখা গেছে, সেগুলো আমার নৈতিকতার সঙ্গে যাচ্ছে না। এগুলো থেকে বাঁচার জন্য আমার কিছু না কিছু করতে হতো। তাই নিজে একটা ব্যবসা শুরু করলাম।
এটিকে আত্মশুদ্ধির আন্দোলন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা কোনো সাময়িক ক্যাম্পেইন বা নিছক মজার উদ্দেশ্যে নয়। আত্মশুদ্ধির আন্দোলন, ক্ষুধামন্দা দূরীকরণ ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সৎ উপায়ে উপার্জনের লক্ষ্যে ব্যবসাটা শুরু করেছি। অন্য কারো বিরুদ্ধে আন্দোলন করার আগে, আঙুল তোলার আগে নিজেকে ভালো হতে হবে। আমি চাই না লোভে পড়ে যেতে, আমি চাই না পা পিছলে পড়ে যেতে। তাই আগে নিজে আত্মশুদ্ধির আন্দোলন করছি। আর এই চা বিক্রিটা আমার আত্মশুদ্ধি আন্দোলনের একটি অংশ। পাশাপাশি ক্ষুধা থেকে মুক্তি চাইছি, স্বাবলম্বী হতে চাইছি।

রনি বলেন, আমার বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে শিখিয়েছে জনগণের টাকা মেরে খাওয়ার চাইতে রিকশা চালানো সম্মানের, জুতা সেলাই করা সম্মানের, চা বিক্রি করা সম্মানের। আর আমি সেটাই করছি। আমি এখানে দোষের কিছু দেখছি না। যারা আমার কাছে লোভনীয় ও নেতিবাচক প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল তারা যেন আর না আসে, সেজন্য আমি এই কাজ শুরু করেছি।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কেন চা বিক্রি করতে পারবে না? কেন রিকশা চালাতে পারবে না? কেন ছোটখাটো কাজ করতে পারবে না? আপনারা তাকে অসম্মান করবেন কেন, তাকে বিসিএস ক্যাডার হতে হবে কেন, কেন তাকে চাকরিই করতে হবে? কেন আপনারা তাকে শুধু চাকর বানাতে চাইছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে আজ চা বিক্রি করছে, কাল তো তার বড় একটা চায়ের ব্র্যান্ড হতে পারে। আজ রিকশা চালাচ্ছে, কাল সে রিকশাটাকে আর্টিস্ট হিসেবে উপস্থাপন করা শুরু করবে। এমন হতে পারে না? এভাবে আপনি চিন্তা করছেন না কেন?

ঢাবির এই শিক্ষার্থী বলেন, ব্রিটিশদের কাছে বা তারও আগে আমরা এমনভাবে শোষিত হয়েছি যে আমরা সবাই চাই পড়াশোনা করে জমিদার হবো এবং সবাইকে শাসন করব। এই জমিদারি ভাবটা, খান সাহেবীপনা ভাবটাকে আমি ভাঙতে চাইছি। আমি তাদের যে ঘুমন্ত মস্তিষ্ক আছে, সেটি জাগিয়ে তুলতে চাইছি। আমার শুধু এটুকুই চাওয়া।

চায়ের ব্যবসা উপভোগ করছেন জানিয়ে রনি বলেন, আমার মনে হয়, চায়ের ব্যবসাটা বেশ ভালো, বেশ সুন্দর। আমি খুব উপভোগ করছি। গত এক মাস ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করছি। একদিন আগে আমার ১ হাজার কাপ চা বিক্রি হয়েছে, তারপর আমি ফেসবুকের মাধ্যমে সবাইকে জানিয়েছি। সবাই বিষয়টিকে ভালোভাবে গ্রহণ করেছে। তবে সমালোচনাও হচ্ছে।

তিনি বলেন, যারা আমার এই কাজকে নেগেটিভলি নিচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলব, আপনারা আরও বেশি নেগেটিভলি নেন। নেগেটিভলি নিতে নিতে যখন অনেক প্রশ্ন জমে যাবে, তখন আমার কাছে চলে আসবেন চা খেতে। তারপর যখন আমার চা খাবেন তখন আপনার মস্তিষ্কের চিন্তার ব্যারিকেড গলে যাবে। যে বিষাক্ততা নিয়ে আপনি বেঁচে থাকেন, সে বিষাক্ততা দূরে চলে যাবে। আমি বিশ্বাস করি, যারা আজ আমাকে গালি দিচ্ছেন তাদের মুখ থেকে এই গালিগুলো ফুল হয়ে ঝরবে।

‘এখানে চা মূল্যে চিন্তা ক্রয়-বিক্রয় করা হয়’ প্ল্যাকার্ড প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মনে হয় এখানে যারা চা খেতে আসেন তারা এমনিতেই বুঝে যাবেন যে এটার মানে কী। আপনি জানেন যে এটা একটা সমস্যা এবং এর সমাধান আপনার জানা আছে। তাহলে আপনি সমাধানের সঠিক রোডম্যাপটা দিতে পারলে চায়ের মূল্যে পে করব। চা খাওয়াব কিংবা সে পরিমাণ টাকা আমি আপনাকে দেব।

প্রসঙ্গত, মহিউদ্দিন রনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্ট্যাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। গত বছরের জুলাই মাসে টিকিট কিনতে গিয়ে হয়রানির শিকার হওয়ার পর ঈদুল আজহার আগে কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে অনশন শুরু করেন তিনি। ১৯ দিন অবস্থান করার পর রেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছয় দফা দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন স্থগিত করে ঘরে ফিরে যান রনি।

এর আগে গত এপ্রিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারের আধুনিকায়নসহ ছয় দফা দাবিতে অনশন কর্মসূচি পালন করে আলোচনায় আসেন এই শিক্ষার্থী।

ঢাকা, ০৭ ফেব্রুয়ারি (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএফ

 


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ