Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | মঙ্গলবার, ১৯শে মার্চ ২০২৪, ৫ই চৈত্র ১৪৩০
teletalk.com.bd
thecitybank.com

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জবি শিক্ষার্থীদের নাভিশ্বাস

প্রকাশিত: ১৩ মার্চ ২০২৩, ২৩:২৪

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি

তৈমুর মবিন, জবি: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সাম্প্রতিক সময়ে জীবনধারণের ক্ষেত্রে বিরাট সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। বর্তমানে দেশের সর্বস্তরের মানুষকে চরমভাবে ভোগাচ্ছে।অস্বাভাবিকভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির ফলে জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। ফলে দৈনন্দিন জীবনে নেমে এসেছে অপ্রত্যাশিত দুর্ভোগ। আর, মেসে থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এটা যেনো 'মরার উপর খাড়ার ঘা' হয়ে দাড়িয়েছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ। শিক্ষার্থীদের হল ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় সবাইকে বাসা ভাড়া করে মেসে থাকতে হয়। বর্তমানে বাসা ভাড়া বৃদ্ধিসহ খাবার মূল্যের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে জবির শিক্ষার্থীদের জীবনযাপনে সরাসরি প্রভাব পড়েছে। খাবারের মূল্য বৃদ্ধির ফলে শিক্ষার্থীদের খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন এসেছে। তাছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য নেই পর্যাপ্ত খাবার ব্যবস্থা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছে মাত্র একটি ক্যান্টিন। এখানেও নেই পর্যাপ্ত পরিমাণ ভর্তুকি। আগের দাম থাকলেও পরিমাণ কমানো হয়েছে খাবারের। তবে প্রতি বেলাতেই খাবার শেষ হয়ে যায় নির্ধারিত সময়ের আগেই। এতে করেও অনেক শিক্ষার্থীই বঞ্চিত হয় খাবারের সুযোগ থেকে। ক্যান্টিনে সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যার খাবারের ব্যবস্থা থাকলেও নেই রাতের খাবারের ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীদের দাবি ক্যান্টিনের সংখ্যা বাড়িয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভর্তুকির দিলে কম দামে পরিমাণমতো খাবারের সুযোগ পাওয়া যেতো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতেও (ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র) খাবারের চিত্র একই। টিএসসিতে যেসব খাবারের দোকান আছে সেখানেও পর্যাপ্ত মনিটরিংয়ের সুযোগ না থাকায় দাম বেশি হলেও নিশ্চিত হয়নি খাবারের মান। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ছাত্রীহল 'বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল'। এখানের খাবারের দাম ও মান নিয়েও শিক্ষার্থীরা বার বার অভিযোগ করে আসছে কিন্তু এর কোনো প্রতিকার দেখা যায়নি।

দাম পরিবর্তন না করলেও প্রতিটি আইটেমের পরিমাণই কমানো হয়েছে। খরচ মেটাতে না পেরে অনেকে আবার দুই বেলার জায়গায় এক বেলাই খাচ্ছে বাধ্য হয়ে।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া সুমু ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, আগে আমরা মাসে ৪-৫ বার মুরগি বাজার করে আনতাম এখন ২ বার আনতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। দু’একদিনের ভেতরেই সবজির দাম বাড়ছে। দুই-একদিন আগে যে দামে সবজি কিনতাম একই সবজি পরেরদিন কিনতে গেলে দামের তারতম্য হচ্ছে।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইয়াসিন পিয়াস ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, মুরগির দাম অধিক হওয়ার ফলে কয়েক সপ্তাহ ধরে মুরগি খেতে পারছি না। সস্তায় আলু কিনে ভর্তা-ভাত খেয়ে জীবনধারণ করছি। এমন অবস্থা কখনোই কাম্য নয়।

ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলী ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, কয়েকমাস আগেও সপ্তাহের প্রত্যেক দিন পর্যায়ক্রমে মাংস, মুরগী, ডিম ও সবজি খেতে পারতাম। কিন্তু ইদানিং দ্রব্যমূল্যের দাম লাগামহীন ভাবে বেড়ে যাওয়ার ফলে আমাদের খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনতে হয়েছে। লাগাম টানতে হয়েছে দৈনন্দিন খাবারের ব্যবস্থায়। এখন বেশির ভাগ সময় ভর্তা, সবজি-ভাত খেয়েই দিন পার করতে হচ্ছে। আগে সকালের নাস্তা যদি বাহিরে রুটি-কলা দিয়ে করতাম তাহলে ১৫-২০ টাকার মধ্যেই হয়ে যেতো এখন সকাল বেলা রুটি-কলা খেতে গেলেই ৩০-৪০ টাকা চলে যায়। এমন অবস্থায় আমাদের দুর্ভোগ পোহানো ছাড়া আর কোনো গতি নেই।

চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী বর্ণ (ছদ্মনাম) থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই একটি মেসে। চলেন টিউশনি করিয়ে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সাথে খরচের পাল্লায় কুলিয়ে উঠতে না পেরে বিগত ১ মাস ধরে পরিমাণ কমিয়েছে খাবার ও বাজারের। আগে যেখানে মাসের অধিকাংশ সময়েই মাছ বা মুরগী খেয়ে চলতো সেখানে এখন শাক-সবজিই একমাত্র ভরসা। আর ছোট মাছ বা ডিম কিনলে কম খেয়েই একদিনের জায়গায় দুইদিন চালান এই শিক্ষার্থী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, পুরান ঢাকায় আমার বাসা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে আমাদের জীবনাযাপনে পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছি। ডিম-ভাত বা খিঁচুড়ি দিয়ে আগে সকালের নাস্তা করতাম। ইদানীং খাবারের মূল্যবৃদ্ধি হওয়ায় সকালের নাস্তা থেকে ডিম বাদ দিয়েছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ তম ব্যাচের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মারুফ ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে রাতের খাবারের সুযোগ থাকলে আর দাম আমাদের নিয়ন্ত্রণে রাখার উদ্যোগ নিলে উপকার হতো। আমাদের এখানে খাবারেরও পর্যাপ্ত সুযোগ নেই।

সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী শিমু বলেন, দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ার কারণে মাস শেষে হাত খরচের টাকা থাকে না। দেখা যায়, আগে যে টাকা বাসা থেকে আনতাম সে টাকায় মাস ঠিকঠাকভাবে চললেও এখন চলছে না। পুনরায় হাত খরচের টাকা বাসা থেকে নিতে হচ্ছে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আদিবা ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়তির কারণে আমাদের খাবার ব্যবস্থার ওপর সরাসরি প্রভাব পড়েছে। আমরা এখন আগের তুলনায় বাজার কম করি। আগে বাজার করতে গেলে এত হিসেব-নিকেশ করতাম না কিন্তু এখন করা লাগে।

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশে সবকিছুর দাম বাড়তি। এতে করে যেমন সারাদেশের মানুষের কষ্ট হচ্ছে তেমনি ভাবে শিক্ষার্থীরাও কষ্ট থেকে রেহাই পাচ্ছে না।

ক্যান্টিনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ক্যান্টিনের মালিক খাবারের দাম আরোও বাড়াতে চেয়েছিল কিন্তু আমি বার বার বলে সেটি বন্ধ রেখেছি। যেহেতু এখন সবকিছুর দাম বাড়তি তাই ক্যান্টিনের খাবার গুলোর দামও বাড়তে পারে সামান্য। কর্তৃপক্ষ ভর্তুকির বিষয়টি নজর দিয়ে দেখতে পারেন এতে শিক্ষার্থীদের উপকার হবে।

ঢাকা, ১৩ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ