
আবির হোসেন, ইবি: প্রতিষ্ঠার ৪৩ বছর পেরিয়ে ৪৪এ পদার্পণ করেছে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। তবুও আবাসন নিয়ে শিক্ষার্থীদের আক্ষেপ কাটেনি। মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে আলোয় আলোকিত পুরো ক্যাম্পাস, সেজেছিল নবরূপে। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসকে ঘিরে নানা কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
৪৪ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল হল, শহীদ জিয়াউর রহমান হল, সাদ্দাম হোসেন হল, লালন শাহ হল, দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল, খালেদা জিয়া হল, প্রধান ফটক, প্রশাসন ভবন সহ বিভিন্ন ভবনে করা হয়েছে আলোকসজ্জা।
শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন। বিভিন্ন জায়গায় প্রিয় মানুষ, বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরেছেন, মেতেছেন সেলফিতে। এতো আনন্দের মধ্যে রয়েছে অনেক আক্ষেপও। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ক্ষোভ।
অনেকেই লিখছেন, ৪৩ বছরের ইতিহাসে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব স্বকীয়তায় প্রশাসনিকভাবে হলে হলে সিট বরাদ্দ দিতে পারেনি। সুষ্ঠু, সুন্দর শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ তৈরি হয়নি। আরেক অন্ধকারের নাম আবাসিক হলের গণরুম। এসব নানান অপ্রাপ্তি নিয়ে শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ট্রল করছেন, মিম প্রকাশ করছেন।
প্রথম বর্ষের গণরুমের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় ক্যাম্পাসলাইভ২৪কম-এর। তারা আক্ষেপ করে জানান, আমরা গাদাগাদি করে চার জনের কক্ষে ২০-২৫ জন থাকছি। এখানে পড়াশোনা, ঘুম ও বিশ্রামের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের গণরুমের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘আমরা অনেক স্বপ্ন, আশা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। আমার বাবা-মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিল আমাকে মানুষের মতো মানুষ করবে। কিন্তু এখানে এসে আমার স্বপ্নভঙ্গ শুরু হয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় আজ ৪৩ বছর পেরিয়ে ৪৪ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। কিন্তু এখনো আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য শতভাগ আবাসিকতার ব্যবস্থা করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
সাদ্দাম হোসেন হলের গণরুমের এক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, ‘আমাদের সিনিয়ররা আমাদেরকে রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। দীর্ঘদিন ধরে চলমান থাকা এ গণরুম সংস্কৃতি, যা স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশকে ব্যাহত করছে।’
কৃষক বাবার একমাত্র আশার আলো ওই শিক্ষার্থী আক্ষেপ করে ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘আমরা এখানে পড়াশোনা করে বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য এসেছি। কিন্তু আমরা গণরুমে থেকে অপরাজনীতির বলি হচ্ছি। এতে আমাদের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন আজ হুমকির মুখে।’
শেখ রাসেল হলের গণরুমের আরেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিসব উপলক্ষে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। অনেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। কিন্তু আমাদের আবাসন সংকট দূর করতে পারেনি।’ তিনি এটিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোয় আলোকিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অন্ধকার’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, 'আমাদের নতুন চারটি হলের কাজ চলমান রয়েছে। এগুলো সম্পন্ন হলে আবাসন সংকট অনেকটাই নিরসন হবে।'
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যলয় দিবসের নানা কর্যক্রমের মধ্যে ছিল জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন, মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, বর্ণাঢ্য আনন্দ র্যালি, আলোচনাসভা, কেক কাটা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়সভা।
ঢাকা, ২৩ নভেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: