Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com
বিশ্ব রেডিও দিবস আজ

দেশের এফএম রেডিও কি হারিয়ে যাবে?

প্রকাশিত: ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, ২১:৩৪

রেডিও

লাইভ প্রতিবেদক: দেশে এফএম (ফ্রিকোয়েন্সি মডুলেশন) রেডিও’র সম্প্রচার এলাকার আয়তন এমনিতেই ছোট। তবে এফএম রেডিও’র স্টেশনগুলো ছিল বেশ বড়সড়। প্রচুর কর্মীতে গমগম করতো অফিসগুলো। হালে এফএম রেডিও স্টেশনগুলোর সব আয়তনই ছোট হয়েছে। ছোট হতে হতে কতগুলো স্টেশন বন্ধই হয়ে গেছে। অনেক স্টেশন গুটিয়ে ছোট করে ফেলা হয়েছে। বিজনেস (বিজ্ঞাপন) নেই, খরচ (পরিচালন ব্যয়) বেড়ে যাওয়ায় অনেক স্টেশন কর্তৃপক্ষ রেডিও স্টেশনের আয়তন ছোট করে কোনোমতে রেডিওগুলো টিকিয়ে রেখেছেন।

২০০৬ সালের পর থেকে সকালে অফিসে যাওয়ার পথে ব্যক্তিগত গাড়িতে অফিসে বা অন্য কোথাও যাওয়ার পথে, বিকাল-সন্ধ্যায় ঘরে ফেরার পথে, হাতের মোবাইলে এফএম রেডিও চালিয়ে শোনা যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। ২০১২ সালে থ্রিজি চালুর পর ডিজিটাল মিডিয়ার উত্থানে রেডিও জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। রেডিও সংশ্লিষ্টরা বলেন, রেডিও’র শ্রোতা সংখ্যা পরিমাপ করার তেমন কোনও পদ্ধতি না থাকায়, বর্তমানে এর শ্রোতা আছে কিনা বলা মুশকিল। বা থাকলেও কী পরিমাণে আছে—তা জানার উপায় কই? বর্তমানে শ্রোতার সংখ্যা যা বলা হয় তা একেবারে অনুমানভিত্তিক। আগে মানুষ গাড়িতে, হাতের মোবাইলে এফএম রেডিও শুনতো, যা চোখে পড়তো। ফলে তখনও ধারণার ওপরই এ নির্ধারণ করা হতো।

সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, বর্তমানে যেভাবে চলছে, সেভাবে চললে আগামী ৫ বছরের মধ্যে দেশে আরও কোনও এফএম রেডিও থাকবে না। এমনকি আগেও শেষ হয়ে যেতে পারে সাবেক জনপ্রিয় এই মাধ্যম।

জানতে চাইলে এফএফ রেডিও ঢাকা এফএম এবং রেডিও আম্বারের প্রধান নির্বাহী আমিনুল হাকিম বলেন, ‘ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের উপস্থিতি, স্পেক্ট্রাম চার্জের বহুধাপ যুক্ত হওয়া, পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাওয়া, বাজারের তুলনায় বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়া, রেভিনিউ শেয়ার ইত্যাদির কারণে এফএম রেডিও টিকে থাকতে পারছে না। যারা আছে তারা নিজেদের অনেকাংশে গুটিয়ে নিয়েছে।’

নিজের প্রতিষ্ঠান দুটির কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘দুটি প্রতিষ্ঠানকে একেবারে ছোট করে ফেলা হয়েছে। কোনোমতে প্রতিষ্ঠান ‍দুটি টিকে আছে। যদিও একসময় রেডিও দুটি দাপটের সঙ্গে পরিচালিত হতো।’

রেডিও সংশ্লিষ্টরা বলেন, টিভিতে বা খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন প্রচার হলে বিটিআরসির সঙ্গে রাজস্ব ভাগাভাগি করতে হয় না। কিন্তু এফএম রেডিও-তে কোনও বিজ্ঞাপন প্রচার হলে বিটিআরসিকে রাজস্ব দিতে হয়ে। কোনও রেডিও ভিন্ন শহরে অপারেশন কার্যক্রম চালাতে গেলে তাদের ওই শহরে স্পেক্ট্রাম ব্যবহারের জন্য পৃথক চার্জ দিতে হয়। এটাও একটা বড় সমস্যা। ব্যাপকভাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম (ফেসবুক, ইউটিউব, ওটিটি ইত্যাদি) চলে আসায় রেডিও’র চাহিদা কমে গেছে। শ্রোতা কমে যাওয়ায় বিজ্ঞাপনও কমে গেছে।

জানা গেছে, এরইমধ্যে কয়েকটি এফএম রেডিও স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। এরমধ্যে রয়েছে— রেডিও নেক্সট, রেডিও আমার, এশিয়ান রেডিও, রেডিও ঢোল এবং রেডিও এজ।

আর বর্তমানে টিকে থেকে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে—রেডিও ফুর্তি, এবিসি রেডিও, রেডিও টুডে, ঢাকা এফএম, রেডিও ধ্বনি, পিপলস রেডিও, রেডিও স্বাধীন, রেডিও ভূমি, রেডিও দির-রাত, জাগো এফএম, ক্যাপিটাল এফএম, বাংলা রেডিও, সিটি এফএম, স্পাইস এফএম, রেডিও একাত্তর, কালারস এফএম, রেডিও আম্বার এবং সূফী এফএম।

এছাড়া বাংলাদেশ চারটি এফএম ব্যান্ডে রেডিও পরিচালনা করে।

এফএম রেডিও ‘রেডিও আমার’র জনপ্রিয় প্রোগ্রাম আমার ভালোবাসা উইদ লাভগুরুর সঞ্চালক তামিম হাসানের কাছে তার অনুষ্ঠান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারের শেষ দিকে এসে শ্রোতা সংখ্যা একেবারে ছিল না বললেই চলে। তবে তা সমসাময়িক অন্যান্য এফএম রেডিও’র চেয়ে বেশি ছিল। অনুষ্ঠানটি যখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে, সে সময়ের তুলনায় শেষ দিকে ৮০ শতাংশ শ্রোতা কমে গিয়েছিল।’

তিনি মনে করেন, রেডিও স্টেশনগুলো ভবিষ্যতের কথা ভাবেনি। তারা যদি ডিজিটাল কনটেন্টের দিকে মনোযোগী হতো তাহলে অ্যাপ, ইউটিউব থেকে অনেক টাকায় আয় করতে পারতো। তিনি ভারতের আরজে প্রাভীন, মিরচি প্লাস রেডিও’র বলিউড নায়িকা কারিনা কাপুরের ‘হোয়াট ওমেন ওয়ান্ট’ নামে অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ইউটিউবে তাদের অনুষ্ঠান দেখতে কত ভালো লাগে। আমাদের এখানে এসব নেই। মোট কথা কনটেন্টের অভাবে এফএম রেডিওগুলো মারা যাচ্ছে। তিনি রেডিওর মালিকপক্ষগুলোকে দোষারোপ করে বলেন, ‘যখন এই খাত থেকে প্রচুর আয় হয়েছে—তখন তারা এখান থেকে তা তুলে নিয়ে গেছেন। পুনঃবিনিয়োগ করেননি। ফলে এই শিল্প খাতটি শক্ত ভিত্তি পায়নি। পুনঃবিনিয়োগ হলে ভালো কনটেন্ট তৈরি হতো, মেধাবী লোকবল থাকতো।’

জানা যায়, ‘রেডিও আমার- এর সম্প্রচার বন্ধ আছে। কর্তৃপক্ষ আবারও এই স্টেশনটি চালু করতে চান বলে জানালেন তামিম হাসান। তিনি বলেন, ‘আমার ভালোবাসা উইদ লাভগুরু অনুষ্ঠানটি আবারও চালু হতে পারে।’

জানা যায়, এ দেশে এফএম রেডিও চালু হয় ২০০৬ সালে। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি এফএম রেডিও’র জন্য লাইসেন্সিং ব্যবস্থা চালু করে। ২০০৮ সালে এই রেডিও জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ওঠে। ২০১২ সালে দেশে থ্রিজি চালু হওয়ার পর থেকে জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে এফএম রেডিও। মূলত এই সময়ের পরে ডিজিটাল মিডিয়ার উত্থান, বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্মের আগমন (২০১৩ সালে), বিনোদনের জন্য ইউটিউব, ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমুখী হওয়ায় মানুষের মোবাইল থেকে সরতে থাকে এফএম রেডিও। শ্রোতা হারাতে থাকায় বিজ্ঞাপনও কমে আসতে থাকে রেডিওগুলোর।

নাম ও পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একটি এফএম রেডিও’র শীর্ষ নির্বাহী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন— দেখুন, রেডিও এবং টিভিতে বিজ্ঞাপন প্রচার হলে সরকারকে কোনও রেভিনিউ (রাজস্ব) শেয়ার করতে হয় না। এফএম রেডিও-তে যেকোনও বিজ্ঞাপন প্রচার হলেই তার ভাগ সরকারকে দিতে হয়। এটা এক ধরনের বৈষম্য। এমনিতেই এখন আয় নেই। ভাগ করতে গেলে আর কী থাকে। প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ধরা যাক কোনও একটি রেডিও ঢাকা শহরে চালুর জন্য লাইসেন্স নিলো। কিন্তু রেডিওটি যদি পরবর্তী সময়ে দেশের অন্যকোনও শহরে স্টেশন চালু করতে চায়— তাহলে সেখানকার জন্য ঢাকার শহরের সমান চার্জ, ট্যাক্স ও ভ্যাট নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে দিতে হবে। এই জটিলতার জন্যও এই রেডিও সম্প্রসারণ করেও টিকতে পারেনি উদ্যোক্তারা। এছাড়া বিজ্ঞাপন কমে এখন একেবারে নেই বললেই চলে। ফলে এই শিল্পটা ম্যাচিওর হওয়ার আগেই বৃদ্ধ হয়ে গেলো। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, আগামী ৫ বছর পরে দেশে আর এফএম রেডিও থাকবে না।

রেডিও ধ্বনি ২০১৯ সালে থেকে ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ব্রডকাস্টিং স্টেশন চার্জ বাবদ বকেয়ার পরিমাণ ৯ লাখ ৩০ হাজার ১০০ টাকা। এই টাকা পরিশোধ না করে এফএম রেডিও কর্তৃপক্ষ বিটিআরসির কাছে সব ফি কিস্তিতে পরিশোধ এবং বিলম্ব ফি মওকুফের জন্য টেলিযোগাযোগ সংস্থা বিটিআরসির কাছে আবেদন জানায় ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর। আবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের কোভিড মহামরি আকার ধারণ করার পর এফএম রেডি স্টেশনগুলোর ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ায় তাদের ব্রডকাস্টিং কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। এ অবস্থায় রেডিও’র পক্ষে একসঙ্গে ৪ বছরের ব্রডকাস্টিং স্টেশন চার্জ প্রদান করা কষ্টসাধ্য।

এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসি রেডিওটিকে সমুদয় বকেয়া এক বছরের মধ্যে তিন কিস্তিতে পরিশোধের জন্য নির্দেশ দিয়েছে। বিটিআরসির ২৬৮তম কমিশন বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, আজ ১৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব রেডিও দিবস। ২০১৪ সালে ইউনেস্কোর সাধারণ সম্মেলনের ৩৬তম অধিবেশনে ১৩ ফেব্রুয়ারিকে বিশ্ব বেতার তথা রেডিও দিবস ঘোষণা করা হয়। যদিও বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশে বিশ্ব বেতার দিবস পালিত হচ্ছে। এতে অংশ নেয় বাংলাদেশ বেতার, প্রাইভেট এফএম এবং কমিউনিটি রেডিওগুলো।


ঢাকা, ১৩ ফেব্রুয়ারি (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএফ

 


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ