
বি এম ইউসুফ আলী: আশির দশকের শেষের দিকে আমি ঢাকায় আসি। ভর্তি হই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পড়াশোনার পাশাপাশি একসময় বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ি। তখন বৃহত্তর যশোর ছাত্রকল্যাণ সংসদ নামে একটি সংগঠন ছিল। আমি এর দায়িত্বশীল পদে ছিলাম। সেই সাথে ঢাকাস্থ যশোর সমিতির সাথেও ভালো যোগাযোগ ছিল। এই সংগঠন দুটি বৃহত্তর যশোরের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া যশোরের মাননীয় মন্ত্রীদের নিকট উত্থাপন করতো।
এর মধ্যে বৃহত্তর যশোরকে নিয়ে বিভাগ গঠন, মেডিকেল কলেজ ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং পদ্মা সেতু নির্মাণ ছিল অন্যতম। ইতোমধ্যে যশোর ও মাগুরায় মেডিকেল কলেজ হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও স্থাপিত হয়েছে। আর দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চলের ৫ কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। এর ফলে এই সেতু শুধু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নয়, পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতিই পাল্টে দেবে। আরও বিশদভাবে বলতে গেলে এই সেতু দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ, বাণিজ্য, পর্যটনসহ অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রিয় পাঠক। আশির দশকে "পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন পরিষদ" নামের একটি সংগঠন ছিল। তারা ১৯৮৬ সাল থেকে পদ্মা সেতুর দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন। খোকা শিকদার ও আব্বাসউদ্দিন আনসারী নামের দুই ব্যক্তির নাম সম্বলিত পোস্টার ও ব্যানার ঢাকার বিভিন্ন স্থানে চোখে পড়তো। বিশেষ করে প্রেসক্লাব এলাকায়। সেই সময়ে এই দাবি যারা করতেন তাদেরকে অনেকেই টিপ্পনী কাটতেন। তারা মনে করতেন প্রমত্তা পদ্মায় কোনো ভাবেই সেতু করা সম্ভব নয়। আবার কেউ কেউ বলতেন ব্রীজ নয়, পদ্মায় এক সময়ে বাধ দিতে হবে। কারণ ফারাক্কা বাধের জন্য নদী শুকিয়ে যাবে। আবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মাণে উদ্যোগ নিলে প্রথমে বাধাগ্রস্ত হয়। যদিও তিনি সব বাধা অতিক্রম করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। ধন্যবাদ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে।
মানুষের স্বপ্নের শেষ নেই। একটি স্বপ্ন সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে সে আরও স্বপ্ন দেখে। মাওয়ায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করার ফলে পদ্মায় আরও একটি সেতুর আশার স্বপ্নে বিভোর দক্ষিণ- পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলার অধিবাসীগণ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রত্যাশা করছেন তিনি তাদের দীর্ঘদিনের দাবি আরিচা, নগরবাড়ি (কাজীরহাট) ও দৌলতদিয়া সংযোগকারী ওয়াই টাইপ (Y) দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণে ভূমিকা রাখবেন। বিশেষ করে পাবনাবাসীর দীর্ঘদিনের এ দাবি বাস্তবায়ন হলে রাজধানীর সঙ্গে যাতায়াতে ১০০ কিলোমিটার দূরত্ব কমে যাবে।
পাবনায় নতুন নতুন শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠবে। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। অন্যদিকে রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, শাহজাদপুর, মানিকগঞ্জ ও ঢাকা এবং সেই সঙ্গে কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনা এবং ঢাকার দূরত্ব বেশ কমে যাবে। যাত্রী চলাচল বৃদ্ধি পাবে, সহজতর হবে। তেলের খরচ কমে আসবে অর্ধেকে, পণ্য চলাচলও বৃদ্ধি পাবে এবং সহজতর হবে এবং তার প্রভাবে পণ্যমূল্য নদীর উভয় পাড়ে কমে আসবে। এর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর উপর চাপ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে এবং এই সেতুটি ঝুঁকির হাত থেকে রক্ষা পাবে। তাছাড়াও ঢাকা টাঙ্গাইল রোডের যানজট অনেকাংশে কমে যাবে। বৃহত্তর যশোর উন্নয়ন পরিষদের ১১ দফার অন্যতম দাবি দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের।
২৬ জুন পদ্মা সেতু চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এই সেতু দিয়ে আসা যানবাহনের কারণে এবং মাওয়া রোডের ট্রাকগুলো পুরো দিনের বেলায় তেজগাঁও শিল্প এলাকা কিংবা ইপিজেড এলাকায় ঢুকতে সমস্যায় পড়ছে। এর ফলে সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি যানজটের সমস্যা সৃষ্টি করছে। তবে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু হলে আরিচা রোড দিয়ে সাভার ইপিজেডে কিংবা তেজগাঁও এলাকায় সহজে পৌঁছানো যাবে এবং এখান থেকে স্বল্প সময়ে সহজে বিমান বন্দর বা বেনাপোলে রফতানি যোগ্য পণ্য পাঠানো সম্ভব হবে।
আমরা জানি, আরিচা- দৌলতদিয়া- নগরবাড়ি সড়কে বেশ কয়েকটি বিসিক শিল্পনগরী রয়েছে। দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ করলে তার সাথে রেল যোগাযোগেরও বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। দৌলতদিয়া ও পাবনায় আগেই রেল সড়ক তৈরি করা রয়েছে। নতুন করে আর কোনো রেল সড়ক করার প্রয়োজন হবে না। বর্তমান পদ্মা সেতুতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি আলোচ্য সেতু নির্মাণে ব্যবহার করা গেলে এখানেই শুধু হাজার কোটি টাকার সাশ্রয় হতে পারে। দ্বিতীয় পদ্মাসেতুর স্থলে পদ্মা-যমুনা মিলিত বহুমুখী সেতু নির্মিত হলে বাংলাদেশের উত্তর-দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য তা যোগাযোগ ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে স্বর্ণযুগ তথা বিপ্লব নিয়ে আসবে। তাই দ্বিতীয় পদ্মা সেতু স্থাপনের ঘোষণা আপনার মুখ থেকে শোনার আশায় চেয়ে আছে আরও কয়েক কোটি মানুষ।
লেখক পরিচিত: সিনিয়র লেকচারার
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
কমলাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
ঢাকা, ২৮ জুন (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: