
কৃষিবিদ মো: আতিকুর রহমান: শিল্পায়নের গতির সাথে সঙ্গতি রেখে কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত করে তাদের জীবনমান উন্নয়নে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অপরিসীম। ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ অবধি বিগত ৬ দশকে কৃষি উন্নয়নে কৃষি গবেষণার পাশাপাশি দক্ষ কৃষি প্রশাসক ও কৃষি প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। তৃণমূল জনসাধারনের সাথে সকল স্তরের মানুষের সার্বিক যোগাযোগ রক্ষা ও সেতুবন্ধন তৈরিতে একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করে যাচ্ছে।
দেশের সকল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবদান স্বীকার করেই বলা যায় প্রথাগত ও নিয়মতান্ত্রিক পাঠদানের মাধ্যমে শুধু কৃষিবিদ তৈরীই নয়, প্রাচীন ও সেকেলে কৃষিকাজ, চাষবাস তথা ফসল উৎপাদনের ধ্যান ধারণা পাল্টে দিয়েছে। কেবল স্বদেশের নয় আন্তর্জাতিক কৃষিজপণ্যের উৎপাদন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আনয়নের মাধ্যমে বিশ্বের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য ঘাটতি মেটাতে বিশ্বের কৃষিবিজ্ঞানের সূতীকাগার খ্যাত এ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে যাচ্ছে।
খাদ্য ঘাটতি মেটাতে দেশের কৃষির আধুনিকায়নসহ নব্য কৃষি বিপ্লবের জন্য নিয়মিত নতুন নতুন কৃষি গবেষণা ও উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ডের মাধ্যম দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অপরিমেয়। দেশের প্রান্তীক জনগোষ্ঠীর সাথে বিশেষকরে খেটে খাওয়া কৃষক সমাজের সাথে প্রশাসন তথা রাষ্ট্র পরিচালনায় যুক্ত ব্যক্তি, দপ্তর, সংস্থা, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান প্রভৃতির সাথে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটগণ সার্থকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রশাসন, পুলিশ, ফরেন সার্ভিস, কৃষি সংশ্লিষ্ট ক্যাডার সহ অন্যান্য ক্যাডার সার্ভিস এবং বিভিন্ন সরকারী দপ্তর ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী রয়েছে।
উপজেলা পর্যায়ে শুধু কৃষি সংশ্লিষ্ট ক্যাডারভূক্ত ৬টি পদ যেমন: উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা, উপজেলা ভ্যাটেরিনারি সার্জন এবং উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে দেশের প্রতি উপজেলায় গড়ে ০৬ জন করে প্রায় তিন হাজার (৩০০০) জন কৃষিবিদ কর্মরত আছেন যাদের প্রায় সকলেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাছাড়া উপজেলা কৃষি প্রকৌশলী, হাঁস-মুরগী উন্নয়ন কর্মকর্তা, মহিষ উন্নয়ন কর্মকর্তা, লাইফস্টক এক্সটেনশন অফিসার, কৃত্রিম প্রজনন উপকেন্দ্র গুলোতে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবেও এখানকার কৃষিবিদগণ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বর্তমানে কাজ করছেন।
এটি একটি কৃষি বিষয়ক টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর পড়াশোনার পদ্ধতি সেমিস্টার সিস্টেমে সম্পন্ন হয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন সেশন জট না থাকায় ৪ বছরেই একজন শিক্ষার্থী গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে থাকে। বর্তমানে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬ টি অনুষদের অধীন ৪৬ টি বিভাগে অধ্যয়নরত মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৪৮৩ জন। টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় এতে সারা বছরই বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্প চলমান থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্স সিস্টেম (বাউরেস) এর অধীন ৪২৪ টি গবেষণা প্রকল্প চলমান আছে।
এসব প্রকল্প থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরণের উদ্ভিদ ও ফসলের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবিত হচ্ছে , যা থেকে দেশের প্রান্তীক জনগোষ্ঠীর মানুষ প্রত্যক্ষভাবে সুফল লাভ করছে। দৃষ্টান্ত স্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে, অতিসম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে লবণাক্ত সহিঞ্চু ও স্বল্প সময়ে উৎপাদনকৃত উচ্চফলনশীল তিনটি সরিষার জাতঃ বাউ সরিষা-১, বাউ সরিষা-২, বাউ সরিষা-৩ এবং লবণাক্ত সহিঞ্চু ধান বাউ ধান-৩ উদ্ভাবন করেছে ।
এ জাতগুলো বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের অধিক লবণাক্ততাযুক্ত এলাকার প্রান্তীক কৃষকদের কাছে পৌছবে কৃষিবিদদের মাধ্যমেই। বিভিন্ন বারমাসী ফল-যেমন: বাউ আম-২ (আম্রপালি,সবচেয়ে মিষ্টি আম), সিডলেস বাউ আম-৩ (আঁটি ছাড়া আম), ডায়াবিটিক বারমাসী বাউ আম-৪, বাউকুল, আপেলকুল, স্ট্রবেরী, ড্রাগনফল সহ নানান ধরণের ফলকে বাংলাদেশের মানুষের জন্য সহজলভ্য করেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিদগণ।
প্রতিষ্ঠানটির ধরণের কারণেই এর শিক্ষার্থীদের জনসম্পৃক্ততার অপার সুযোগ রয়েছে এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর মাধ্যমে সাধারণ কৃষকদের সাথে রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের সাথে বা বিভিন্ন সংগঠন ও দলের সাথে যোগাযোগের সেতুবন্ধন তৈরীর সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিদদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার প্রত্যক্ষ সুফল ভোগ করছেন দেশের তৃণমূলের প্রান্তীক জনগোষ্ঠীর মানুষ। মাটি ও মানুষের চাহিদা পূরণ, শিল্পায়নের সাথে কৃষির সমগতিক অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখা, দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণ, কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন প্রভৃতি ক্ষেত্রে দেশের অপরাপর উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তুলনায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা বহুগুণ বেশি।
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান দেশের অন্য যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তুলনায় যোজন যোজন এগিয়ে। তাই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গণমানুষের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আজ ১৮ আগস্ট ২০২২, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল মহান ব্যাক্তি, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত ও বর্তমান সময়ের সম্মানিত সকল শিক্ষকের প্রতি সশ্রদ্ধ ভালোবাসা, সকল অ্যালামনাই ও বর্তমানে অধ্যয়নরত ভবিষ্যৎ কৃষিবিদদের প্রতি নিরন্তর শুভকামনা রইলো।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গণমানুষের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সকলের হৃদয়ে স্থান ধরে রাখুক। সমৃদ্ধ হোক বাংলাদেশ, সমৃদ্ধ হোক প্রাণের বিদ্যাপীঠ-বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
লেখকঃ আহ্বায়ক,বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
এম এস ইন কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা বিভাগ (১ম সেমিস্টার)
আরো জানতে কমেন্টে ক্লিক করুন,,,
ঢাকা, ১৮ আগস্ট (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//ওপিটি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: