
রুপুর লাইভ: হাত-পা অকেজো। পারেন না স্পষ্টভাবে কথাও বলতেও। শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে যুদ্ধ করে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন জোবায়ের হোসেন উজ্জ্বল। মুখ দিয়ে উত্তরপত্র লিখে এইচএসসি পরীক্ষা জয় করেছেন। মেধাযুদ্ধে ৪.৫৮ পয়েন্ট নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে কৃতকার্য হয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন সমাজকে।
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার হযরতপুর গ্রামের জাহিদ সারোয়ার চাষির ছেলে উজ্জ্বল। তিন ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয় তিনি। নিজের সাফল্যে আত্মহারা অদম্য এই শিক্ষার্থী। হতে চান কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার।
জানা গেছে, জন্মের পর থেকে বহুমাত্রিক শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে তার বেড়ে ওঠা। নিজ বিছানাকে শ্রেণিকক্ষ বানিয়ে উজ্জ্বল মুখ দিয়ে বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টিয়ে পড়াশোনা করেন। শুধু তাই নয়, মুখ দিয়ে মোবাইল ফোন চালিয়ে অনলাইনে ক্লাসও করেছেন। উজ্জ্বলের এমন সাফল্যে খুশি তার পরিবার, কলেজের শিক্ষক ও পাড়া-প্রতিবেশীসহ এলাকার সবার মনে বইছে আনন্দের বাতাস।
ছেলের এমন সাফল্যে উজ্জ্বলের বাবা জাহিদ সারোয়ার বলেন, এসএসসি পাস করার পর উজ্জ্বলকে বালারহাট কলেজে ভর্তি করে দেই। কিন্তু করোনার কারণে অটো পাস দেওয়ার খবরে তার মন খারাপ ছিল। তার ইচ্ছা ছিল, পরীক্ষা দিয়েই সে এইচএসসির বাধা টপকাবে। পরে সশরীরে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত শুনে সে দারুণ খুশি হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে অটোরিকশায় শুয়ে সে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়া-আসা করতো। পরীক্ষার হলে বিছানায় শুয়ে মুখ দিয়ে কলম চালিয়ে সবগুলো পরীক্ষা দিয়েছে উজ্জ্বল। সে পরিবারের বোঝা না হয়ে আত্মনির্ভরশীল হতে চায়। সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।
শিক্ষার্থী উজ্জ্বল বলেন, মুখ দিয়ে লিখতে আমার বেশ কষ্ট হয়। তবে সব প্রতিকূলতাকে হারিয়ে আমি সামনে এগিয়ে যেতে চাই। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, যেন সামনের পথ চলা আমার জন্য আরও সহজ হয়।
বালারহাট আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের প্রিন্সিপাল মো. আলাউদ্দিন জানান, বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী হওয়ার পরও লেখাপড়ার দিকে মেধাবী উজ্জ্বলের দারুণ আগ্রহ। সে যে ফল এনেছে, তা অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীও করতে পারেনি। আমরা চাই, প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে সে জীবনে ভালো কিছু করুক। সামনে এগিয়ে যাক এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।
ঢাকা, ১৪ ফেব্রুয়ারি (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: