
ফরিদপুর লাইভ: পাষান্ড। একি কান্ড ঘটালেন। ঔরসজাত সন্তানের সামনে বাবা-ভাইকে এভাবে নির্যাতন কে সইবে? তাও আবার ওই শিশু কন্যারই স্কুলের কক্ষে। তবুও মেনে নিতে হয়েছে শিশু কন্যাটির। তার কিছুই করার ছিল না। তবে ভিন্ন কথাও রয়েছে বলে তথ্য মিলেছে। জানা যায় ওই স্কুল ছাত্রীর মা নেই। বাবা আর বড় ভাই এর সাথে থাকতো সে। এই সুযোগে বাবা আর ভাই মাঝে মধ্যেই ওই শিশুটিকে যৌন নির্যাতন ও শারিরীক নির্যাতন চালাতো। বিষয়টি নিয়ে ওই ছাত্রী তাদের শিক্ষকদেরও জানান দিয়েছিল। অবশেষে ওই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় গোটা এলাকাজুড়ে আলোচনা আর সমালোচনার ঝড় বইছে। ঘটনাটি ফরিদপুরের মধুখালীর একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। স্কুলের শ্রেণিকক্ষে বাবা-ছেলেকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনে দৃশ্য এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এনিয়ে চলছে নানান সমালোচনা।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, ওই ভিডিওটিতে দেখা যায়, এক নারীর নেতৃত্বে বাবা-ছেলেকে নির্যাতন করছেন। সঙ্গে এক যুবক ও উঠতি বয়সী কয়েক তরুণ। ভিডিওটি ভাইরাল হলে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে অপরাধীদের শাস্তি দাবি উঠেছে ওই এলাকায়। এ ঘটনায় কুতুব উদ্দিন নামের এক যুবককে আটক করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জানতে চাওয়া হচ্ছে এর নেপথ্যের গল্প।
ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানাগেছে, গত ১৭ মার্চ উপজেলার আড়ুকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণি কক্ষে তালা দিয়ে তাদের নির্যাতন করা হয়। নির্যাতিত ইয়ামিন মৃধা রাজু ও তার ছেলের নাম রাজন মৃধা। তারা মাঝকান্দী গ্রামে মো. সালাম শেখের বাড়িতে দীর্ঘদিন ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে আসছেন। তাদের বাড়ি উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের (সালমতপুর) রউফনগর গ্রামে। নদী ভাঙনে ভিটামাটি হারিয়ে প্রায় ১২ বছর মাঝকান্দি এলাকায় ভাড়া থাকেন। নিজের মেয়ে ও বোনকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তুলে পরিকল্পিতভাবে তাদের নির্যাতন করা হয়।
তবে ভিন্ন একটি সূত্র জানায়, আড়ুয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইসরাত জাহান লিপি জানান, ওই ছাত্রী আমাদের স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তার মা নেই। বাবা ও ভাই জুটমিলের শ্রমিকের কাজ করেন। কয়েক মাস আগে সে শিক্ষকদের জানায় তার বাবা ও ভাই তাকে শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা কি করা যায় তাই ভাবছিলাম।
১৫-২০ দিন আগে সে আমার সঙ্গে ফরিদপুরের বাসায় চলে আসে। এরপর তাকে বুঝিয়ে তার বাবা ভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দেই। নির্যাতনের ভয়ে গত ১৪ মার্চ আবার আমার বাসায় চলে আসে। ১৭ মার্চ তার বাবা-ভাইকে স্কুলে ডেকে আনা হয় বিষয়টি জানার জন্য। এ সময় স্থানীয়রা বিষয়টি জেনে তারাও চলে আসেন। মেয়েটি সবার সামনে তার সঙ্গে খারাপ আচরণের বিষয়টি স্বীকার করে।
পরে স্কুলের একটি রুমের মধ্যে বহিরাগতরা তাদের মারধর করে। তবে নির্যাতনকারীদের আমি চিনি না। এ বিষয়ে নির্যাতনের শিকার ও স্কুল ছাত্রীর বাবা ইয়ামিন মৃধা রাজু বলেন, স্কুলশিক্ষক ইসরাত জাহান লিপির কোনো সন্তান নেই। তিনি আমার মেয়েকে লোভ-লালসা দিয়ে তার কাছে নিয়ে রাখতে চান। এর আগেও তিনি আমার মেয়েকে আমাদের না জানিয়ে তার বাসায় নিয়ে গেছেন।
পরে খুঁজে তার বাসায় পেয়েছি। তিনি আমার মেয়েকে নিয়ে তার কাছে রাখতে চান। ১৭ মার্চ আমাকে ও আমার ছেলেকে স্কুলে ডেকে নিয়ে লোকজন দিয়ে প্রথমে ভয়ভীতি দেখিয়ে স্ট্যাম্পে লিখিত দিতে বলেন। রাজি না হলে আমার-ছেলের নামে মিথ্যা অভিযোগ তুলে নির্যাতন করেন।
এ বিষয়ে হেমায়েত হোসেন নামের স্থানীয় এক যুবক জানান, যদি ধর্ষণের ঘটনা হয়ে থাকে তার বিচার করবে প্রশাসন। এমনকি ঘটনার সময় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি, কোনো মেম্বার বা কোনো জনপ্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। বিষয়টি নিয়ে নানান কথা ও গুজব শুনা যাচ্ছে।
এদিকে মির্জাকান্দী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কুদ্দুস হোসেন জানান, এটা প্রাইমারি স্কুলের ঘটনা। ঘটনার দিন আমি এলাকায় ছিলাম না। তবে ঘটনা শুনেছি। এই ঘটনা শুনে খুবই কষ্ট পেয়েছি। এটা ঠিক নয়।
এ ব্যাপারে আড়ুয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কবিরুজ্জামান জানান, এরকম একটা ঘটনা ঘটেছে। তবে মারামারির সঙ্গে আমাদের শিক্ষকরা কেউ জড়িত নয়। স্থানীয় কিছু লোকজন শ্রেণিকক্ষে তাদের মারধর করে। আমরা জানতে পেরে পুলিশে খবর দেই। পুলিশ এসে তাদের নিয়ে যায়।
মধুখালী থানার ওসি মো. শহিদুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় মেয়ের বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। কুতুবউদ্দিন নামের একজনকে আটক করা হয়। আমরা তদন্ত করে দেখছি। কেউ দোষী প্রমাণিত হলে ছাড় দেয়া হবে না। আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
এই ঘটনার ব্যাপারে মধুখালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। এ ঘটনায় ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা ও শিক্ষকরা জড়িত আছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা হবে।
ঢাকা, ২৬ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: