Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com
খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় জাবি শিক্ষার্থীরা

‘ইফতারে শরীর ক্লান্ত থাকে, ঠিকমতো সেহরিও খেতে পারি না’

প্রকাশিত: ২৮ মার্চ ২০২৩, ০৪:১৬

খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় জাবি শিক্ষার্থীরা

আসিফুল ইসলাম রিফাত, জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) রমজান, ঈদ, বৌদ্ধপূর্নিমার ও গ্রীষ্মকালীন দীর্ঘ ৩৯ দিনের ছুটি শুরু হয়েছে। তবে এর মাঝে গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে কোনো বিভাগ চাইলে পরিবর্তিত সময়ে ক্লাস-পরীক্ষা নিতে পারবে। সেক্ষেত্রে অনেক বিভাগেই নির্ধারিত সময়ানুযায়ী ক্লাস - পরীক্ষা চলছে। পাশাপাশি অসংখ্য শিক্ষার্থীরাই টিউশনি অথবা পার্ট টাইম জবের মাধ্যমে নিজের প্রয়োজনীয় খরচ নিজেরাই বহন করছে। ফলশ্রুতিতে ছুটির মাঝেও একপ্রকার বাধ্য হয়ে তারা এখনও হলে অবস্থান করছেন।

অপরদিকে দীর্ঘ এ ছুটি বিবেচনায় বন্ধ রাখা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ আবাসিক হলগুলোর ডাইনিং। কিছু কিছু হলে ক্যান্টিন ও বন্ধ থাকছে। কিন্তু বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর ক্লাস - পরীক্ষা চলমান থাকার পরও নেই কোনো বিকল্প ব্যবস্থা। তাই রমজানে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের বিপরীতে উল্টো বিপাকে পড়েছেন হাজারো শিক্ষার্থী। সাহরি,ইফতার ও রাতের খাবার নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ রয়েছে যে তাদের কথা বিবেচনা না করেই অধিকাংশ হলের ডাইনিং বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের খাবারের জন্য নির্ভর করতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা,গেরুয়া,আমবাগান অথবা হল সংলগ্ন দোকানগুলোতে। তবে সেখানে নিয়মিত মনিটরিং না করা, খাবারের উচ্চমূল্য এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশন করার মতোও অভিযোগ রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘ছুটিতে কিছু কিছু বিভাগের ক্লাস বন্ধ হলেও অনেক বিভাগে এখনও পরীক্ষা,ল্যাব, ক্লাস চলমান। তাই অনেক শিক্ষার্থী এখনও ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন। এছাড়াও অনেক শিক্ষার্থী টিউশনি করে নিজের ব্যয় বহন করছে, এজন্য দীর্ঘ ছুটিতে তারা বাড়িতে যেতে পারছেন না।’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২৭ মার্চ থেকে মে পর্যন্ত পবিত্র রমজান,পহেলা বৈশাখ,মে দিবস, গ্রীষ্মকালীন ও বৌদ্ধ পুর্নিমা উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৯ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়। তবে ছুটি থাকাকালীন সবগুলো আবাসিক হল খোলা রাখা হয়েছে। কিন্তু আবাসিক হলে অসংখ্য শিক্ষার্থী এখনও অবস্থান করার পরও ক্লাস বন্ধের অজুহাতে বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষার্থীদের খাবারের জন্য নির্ধারিত হলের ডাইনিং ।

সম্প্রতি নতুন উদ্বোধন হওয়া দুটি হলের মাঝে একটি ২১ নম্বর বয়েজ হল। সেখানকার আবাসিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত ওসমান সরদার ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘আমাদের খাবারের খুবই অসুবিধা হচ্ছে এই রমজানে। বিশেষ করে, সেহরির সময় এতো রাতে সেই বটে বা সালাম বরকত হলে যেতে হয়। অনেক সময় যেতে দেরি হয়ে যায়, ফলে ঠিকমতো সেহরি খেতে পারি না। আবার ইফতারের সময় শরীর ক্লান্ত থাকে,এতদূর গিয়ে ইফতার করতেও ভালো লাগে না।’

১০ তলার এই ছাত্র হলে নেই কোনো ডাইনিং - ক্যান্টিন অথবা রমজানে খাবার গ্রহণের বিকল্প ব্যবস্থা। এমতাবস্থায় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান করে ওসমান সরদার বলেন, ‘আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে খুব দ্রুত হল এ ক্যান্টিন চালু করা এবং খাবারের মান নিশ্চিত করা হোক।’

এদিকে যেসব হলে ক্যান্টিন চালু রয়েছে তাও শিক্ষার্থীদের সংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল। ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা বেছে নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বটতলা ও গেরুয়ার ঢালে থাকা খাবারের দোকানগুলোকে। কিন্ত সেখানেও বিপাকে তারা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ এসব খাবার একদিনের বেশি খাওয়া যায় না,দীর্ঘদিনের বাসি খাবার অতি উচ্চমূল্যে এখানে বিক্রি করা হচ্ছে পাশাপাশি এসব দোকানগুলোতে ঠিকমতো মনিটরিং ও হচ্ছেন না বলেও জানান তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নতুন উদ্বোধন হওয়া দুটি হলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আবাসিক হল আছে ১৮টি। এর মধ্যে ছাত্রদের জন্য বরাদ্দকৃত ৯টি এবং ছাত্রীদের জন্য টি।

বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছেলেদের নয়টি হলের মধ্যে একটি নতুন হল। বাকি আটটির মধ্যে সাতটির ডাইনিং বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং ছাত্রীদের নয়টি হলের মধ্যে পাঁচটিতে ডাইনিং চালু রয়েছে। বন্ধ রয়েছে বাকিগুলোর

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মওলানা ভাসানী হলের প্রভোস্ট প্রফেসর . হোসেইন মোঃ সায়েম ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী ক্লাস বন্ধ থাকলে ডাইনিংও বন্ধ থাকে এটা হচ্ছে নিয়ম। তবে আমার হলে আজকেই (২৭ মার্চ) থেকে বন্ধ হয়েছে ডাইনিং।সেক্ষেত্রে বড় ছুটি হলে ডাইনিংও বন্ধ থাকে। তবে ক্যান্টিনের মান খারাপ হলে সেটা অবশ্যই আমরা দেখবো। আমাদের পক্ষ থেকে নির্দেশনা আছে ইদের মিনিমাম দিন আগ পর্যন্ত ক্যান্টিন খোলা রাখতে হবে। এর মধ্যে একদিন ও যদি বন্ধ রাখে তবে ক্যান্টিনের বরাদ্দ বাতিল হবে।’

বটতলা সংলগ্ন খাবারের দোকানগুলোতে খাবারের দাম ও মান নিয়ে অভিযোগ থাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের বটতলা সংলগ্ন তিনটি হল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, কামালউদ্দিন হল এবং মওলানা ভাসানী হলের একটি কমিটি আছে বটতলার দোকানগুলো মনিটরিং এর জন্য। আমি প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলবো যাতে সেখানে খাবারের দাম এবং মানের ব্যাপারে তদারকি বাড়ায়ে দেয়। আমি নিজেও দরকার হয় সে কমিটির সাথে সন্ধ্যায় যাবো।’

তবে শিক্ষার্থীদের তথ্যমতে, যেসব হলের ডাইনিং - ক্যান্টিন খোলা আছে সেখানকার খাবারও যথেষ্ট নিম্নমানের এবং দিনের পর দিন এ অবস্থার অবনতিই হচ্ছে। পাশাপাশি খাবারের দাম বৃদ্ধি ও সম্প্রতি বেশ কিছু হলের ডাইনিং এর খাবারে পোকামাকড় পাওয়ার ও অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলের দর্শন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক আবাসিক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘রমজানের জন্য আলাদা করে কোন ব্যবস্থা নেননি প্রভোস্ট। ডাইনিং শুক্রবার (২৪ মার্চ) থেকে বন্ধ করে দিয়েছেন।আর ক্যান্টিন চালু থাকলেও খাবারের মান খুবই নিম্ন যা খেয়ে রোজা রাখা কঠিন হয়ে যায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘অনেকের পরীক্ষা বা ক্লাস থাকার কারণে বাসায় যায়নি কিন্তু এদের জন্য কোন ব্যবস্থা করে নি প্রোভোস্ট ম্যাম।ম্যাম বলেন সবার তো ক্লাস বন্ধ এখন কিসের জন্য হলে থাকতে হবে। কিছুদিন আগে ক্যান্টিনের খাবারে তেলাপোকা পাওয়া গিয়েছে প্রভোস্ট বিষয়টা জানা সত্ত্বেও কোন ব্যবস্থা নেন নি। তবে আমারা আশা করেছিলাম রমজানে আমাদের জন্য হলের খাবারের দিকটা তদারকি করা হবে কিন্তু বরং ম্যামদের কোন ম্যাথা ব্যথা নেই এই ব্যাপারে।’

রমজানের এই ছুটিতে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে বাংলা বিভাগের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী জহির ফয়সাল ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘পবিত্র রমাদান মাস। অসংখ্য শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে। যাদের প্রায় সবাই রোজা রাখে। দুঃখজনক বিষয় হলো এ বৃহৎ সংখ্যক শিক্ষার্থীর সেহেরি ও ইফতারের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বিশ্ববিদ্যালয় । এতে করে এ বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থী ভুগছে পর্যাপ্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ব্যবস্হাপনার অভাবে। অনেকের টিউশন ও চাকরির পরীক্ষা আছে। আমাদের দাবি শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হলের ডাইনিং খোলা রাখুক’।

এ ব্যাপারে আরো জানতে চাইলে ২১ নম্বর বয়েজ হলের প্রভোস্ট অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর . মোঃ তাজউদ্দীন সিকদার ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘আমার হলটি চালু হয়েছে দুই মাস।এই দুইমাসে আমি অনেক চেষ্টা করেছি এবং করছি একটা ক্যান্টিন ম্যানেজ করতে কিন্তু কেউ আসতে চায়না,কারণ এখানে গ্যাস নেই তো। এখন আমি যদি সিলিন্ডারে রান্না করার জন্য বলি তখন আবার প্রাইসটা বেড়ে যাবে। সেই অতিরিক্ত প্রাইসটা আবার স্টুডেন্টরা দিবে না। এই সংকটের কারণেই আমরা ক্যান্টিনটা শুরু করতে পারিনি তবে ইতিমধ্যে একটি দোকান শুরু করেছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রভোস্ট প্রফেসর নাজমুল হাসান তালুকদার ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘সাধারণত ক্লাস বন্ধের ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাইনিং বন্ধ থাকে। আর এবারের ছুটি তো দীর্ঘ ছুটি এজন্য ডাইনিং বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে রমজানে যেসব শিক্ষার্থীদের ক্লাস - পরীক্ষা চলছে তাদের কথা বিবেচনায় রেখেই আমরা বলেছি হলের ক্যান্টিন খোলা রাখতে। আর যেসব হলে ক্যান্টিন নেই সেসব হলে কেউ যদি মেসও চালু করতে চায় তাহলে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।’

 

ঢাকা, ২৭ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম) //এমএফ

 

 


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ