Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ৩রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com
উড়ছে আর্জেন্টিনা, মেসিদের আক্রমণ

বিশ্ব রেকর্ড, স্বপ্নের ফাইনালে মেসির আর্জেন্টিনা

প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বার ২০২২, ১২:৪৯

লিওনেল মেসির বিশ্ব রেকর্ড

স্পোর্টস ডেস্ক: শুরুটা দেখে মনে হয়েছিল রাজত্ব করতে যাচ্ছে অসাধারণ ফুটবল খেলে সেমি-ফাইনালে ওঠা ক্রোয়েশিয়া। প্রথম ৩০ মিনিট ম্যাচেই খুঁজেই পাওয়া গেল না আর্জেন্টিনাকে। ছন্দময় ফুটবলে দাপট দেখিয়ে খেলতে থাকে ক্রোয়াটরা। কিন্তু এরপর হঠাৎ-ই বদলে গেল দৃশ্যপট। ম্যাচের পরের সময়টুকু জাদু দেখিয়ে গেলেন লিওনেল মেসি। বাঁ পায়ের জাদুকরী ছোঁয়ায় ভুবন ভোলানো ফুটবলে নিজে গোল করলেন, করালেন সতীর্থকে দিয়ে। দাপুটে জয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে গেল আর্জেন্টিনা। 

ক্যারিয়ারে একটাই আক্ষেপ লিওনেল মেসির। বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখা হয়নি। তাই এবার কাতার বিশ্বকাপ শুরুর আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন এটাই তার ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ। মরুর বুকে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হারে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ার শঙ্কায় ছিল আলবিসেলেস্তেরা। কিন্তু দলকে একা হাতে টেনে নিয়ে গেলেন বিশ্বকাপের ফাইনালের মঞ্চে।

যেখানে প্রথম সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ৩-০ গোলের ব্যবধানে বিদায় করে স্বপ্নের ফাইনালে উঠে গেল আর্জেন্টিনা। যেখানে ৩৬ বছর পর আবারও বিশ্বকাপ জয়ের দ্বাড়প্রান্তে নিয়ে গেলেন মেসি নিজেই। তার এক গোল ও এক অ্যাসিস্টের সঙ্গে জুলিয়ান আলভারেজের জোড়া গোলে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের টিকিট পেল লিওনেল স্কালোনির দল।

মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে প্রথম সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে অ্যানহেল ডি মারিয়াকে ছাড়াই মাঠে নামে আর্জেন্টিনা। এছাড়াও শুরুর একাদশের দুই খেলোয়াড় কার্ডজনিত কারণে এই ম্যাচে খেলতে পারেননি। তাই ফর্মেশনে পরিবর্তন আনায় খুব একটা পরীক্ষার মধ্যে পড়তে হয়নি আর্জেন্টিনাকে।

ম্যাচের প্রথম ২৫ মিনিট দুই দলই দেখেশুনে শুরু করে মাঝমাঠে সমানতালে লড়াই করে। তবে কেউই কোনো গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। তবে ৩৩তম মিনিটে মাঝমাঠ থেকে মিডফিল্ডার এনজো ফার্নান্দেজের দারুণ এক পাসে ক্রোয়েট ডি-বক্সের ভেতর বল পান আলভারেজ। কিন্তু সেই বল বিপদমুক্ত করতে গিয়ে তাকে ফাউল করে বসেন ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক লিভাকোভিচ। ফলে তাকে রেফারি হলুদ কার্ডের সঙ্গে আর্জেন্টিনার পক্ষে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন।

৩৩ মিনিটে পেনাল্টিতে স্পট কিকের শট নেন লিওনেল মেসি। তার বুলেট গতির শটে বল সহজেই জালে জড়িয়ে গেলে ১-০ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। তবে এই গোলের রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও গোলের দেখা পেয়ে যায় আলবিসেলেস্তেরা। এবার গোল করেন স্ট্রাইকার আলভারেজ।

৩৯ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে মেসির পাস পেয়ে দুর্দান্ত গতিতে ক্রোয়েশিয়ার ডি-বক্সের ভেতর ঢুকে যান তিনি। এরপর ক্রোয়েশিয়ার দুই ডিফেন্ডারকে টপকে বল নিয়ে গোলবারে লিভাকোভিচকে সহজেই পরাস্ত করে ব্যবধান ২-০ করেন ম্যানচেস্টার সিটির এই স্ট্রাইকার। ফলে প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা।

বিরতি থেকে ফিরে ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে ক্রোয়েশিয়া। তবে এদিন আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগ ও মাঝমাঠের খেলোয়াড়রা প্রতিপক্ষকে কোনো সুযোগ দেননি। ফলে ব্যবধান কমানোড় চেয়ে উল্টো আরেক গোল হজম করে বসে ক্রোয়েশিয়া।

ম্যাচের ৬৯ মিনিটে দারুণভাবে মাঝমাঠ থেকে একা বল নিয়ে ডি-বক্সের ভেতরে আলভারেজকে পাস দেন মেসি। এই স্ট্রাইকার দারুণ ফিনিশিংয়ে আর্জেন্টিনাকে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে দিলেন। কাতার বিশ্বকাপে এটি আলভারেজের ৪র্থ গোল। আর মেসির ৮ম এসিস্ট।

এদিকে বিশ্বকাপে বিশ্ব রেকর্ড। সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডে লোথার মাথেউসের পাশে বসলেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। অর্জনে ভরপুর ক্যারিয়ারে আরেকটি রেকর্ডে নাম লেখালেন লিওনেল মেসি। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড স্পর্শ করলেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। তাকে ঘিরে পৃথিবীজুড়ে তোলপাড় চলছে।

মঙ্গলবার রাতে লুসাইল স্টেডিয়ামে প্রথম সেমি-ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে মাঠে নেমে এই অর্জন ধরা দেয় মেসির। জার্মান গ্রেট লোথার মাথেউসের পাশে বসলেন ৩৫ বছর বয়সী মেসি। বিশ্ব মঞ্চে ২৫ ম্যাচ খেলে দুই যুগ ধরে রেকর্ডটি ছিল শুধু মাথেউসের।

সাবেক এই মিডফিল্ডার ম্যাচগুলি খেলেন পাঁচটি বিশ্বকাপে- ১৯৮২ (২), ১৯৮৬ (৭), ১৯৯০ (৭), ১৯৯৪ (৫), ১৯৯৮ (৪)। গোল করেন তিনি ৬টি।এদিকে মেসিও খেলছেন এই নিয়ে পঞ্চম আসরে। ২০০৬ আসরে ৩টি, ২০১০ সালে ৫টি, ২০১৪ সালে ৭টি, ২০১৮ সালে ৪টি ও কাতারে এখনও পর্যন্ত ছয়টি ম্যাচ খেলছেন তিনি। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে বিশ্ব মঞ্চে ১০ গোল করে গাব্রিয়েল বাতিস্তুতার সঙ্গে যৌথভাবে আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ গোল স্কোরার তিনি।

এদিকে চার আসরে ২৪ ম্যাচ খেলে তালিকায় দুইয়ে আছেন সাবেক জার্মান ফরোয়ার্ড মিরোস্লাভ ক্লোসা। তার মতো ঠিক চার আসরে ২৩ ম্যাচ খেলে তিন নম্বরে ইতালিয়ান গ্রেট পাওলো মালদিনি। এবার কোয়ার্টার-ফাইনাল থেকে বিদায় নেওয়া পর্তুগিজ মহাতারকা ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো পাঁচ আসরে ২২ ম্যাচ খেলে তালিকায় চার নম্বরে আছেন। এখন কেবলই অপেক্ষার পালা।

উড়ছে আর্জেন্টিনা:

প্রথম সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে মাঠে নেমে প্রথম গোল পেলেন মেসি। স্পট কিক থেকে পেনাল্টিতে গোল করলেন তিনি। এর কিছুক্ষণ পরেই গোলের দেখা পেলেন জুলিয়ান আলভারেজ। যার সুবাদে ২-০ গোলে এগিয়ে উড়ছে আর্জেন্টিনা।

মেসিদের আক্রমণ:

প্রতিপক্ষের উচ্চতার চ্যালেঞ্জ সামলে এসেছে আর্জেন্টিনা। অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডসের খেলোয়াড়রা ছিলেন দীর্ঘদেহি। ওই দুই ম্যাচে সকারু-ডাচরা উচ্চতা দিয়ে ভয় ধরালেও তা কাটিয়ে সেমিফাইনালে এসেছে ল্যাতিন দলটি। তবে উচ্চতার পরীক্ষা এখনও শেষ হয়নি। ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণ এবং আক্রমণভাগের খেলোয়াড়রাও লম্বা-লম্বা।

তাদের গোলপোস্টের নিচে আছেন ৬ ফিট ২ ইঞ্চির দেয়াল। বেলজিয়াম-ব্রাজিল ওই দেয়ালে ভুগেছে। রক্ষণে আছেন লভরেন, গার্ডিওল এবং জুরানভিক। তাদের উচ্চতা ছয় ফিটের ওপরে। আক্রমণে আছেন ক্রামারিক, পেরিসিচ এবং পাসালিক। তারাও ছয় ফিটের ওপরে লম্বা। ওই তুলনায় আর্জেন্টিনার ডি পল, রোমেরো, আলভারেজ ছাড়া লম্বা নেই তেমন কেউ। সেট পিচ অর্থাৎ ফ্রি কিক, কর্ণার কিকে সতর্ক হতে হবে মেসির দলের। 

 

লভরেন, জিভারডিওল শুধু লম্বা নন রক্ষণেও জমাট। লভরেন লিভারপুলে খেলেছেন ছয় বছর। অন্যজন আরবি লাইপজিগে খেলেন। ২০ বছর বয়সী গার্ডিওলের বাজার মূল্য ১০০ মিলিয়ন ইউরোর কাছাকাছি। সঙ্গে মাস্টারক্লাস মাঝমাঠ আছে ক্রোয়েশিয়ার। ওটাই তাদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। 

অভিজ্ঞ লুকা মডরিচ, ব্রজোভিক, ওরসিস ও কোভাসিসের মিডফিল্ড আসরের সেরা। তাদের মতো শক্তিশালী মিডফিল্ড নিয়ে বিশ্বকাপে আসতে পারেনি কোন দল। ব্রাজিলের বিপক্ষে মাঝমাঠে তারা ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করেছে। আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগকে আগের চেয়ে সুসজ্জিত বলতেই হবে। পাঁচ ম্যাচে দলটি গোল হজম করেছে পাঁচটি। ক্রোয়েশিয়া মাত্র তিনটি গোল হজম করলেও রোমেরো, ওটামেন্ডিরা নিজেদের প্রমাণ করেছেন। আর্জেন্টিনার কোচও রক্ষণ সামলেই আক্রমণ করতে পছন্দ করেন।  

লিওনেল স্কালোনি দুই উইং দিয়ে আক্রমণে তোলেন দলকে। মেসির সঙ্গে আলভারেজ গোল পাওয়ায় আক্রমণ বেশ শানিত মনে হচ্ছে। আর্জেন্টিনা মন জয় করা খেলা দেখাতে পারেনি মনে করা হচ্ছে। তবে সেই সৌদি আরব, পোল্যান্ড থেকে অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডস ম্যাচে আক্রমণ তুলে প্রতিপক্ষকে চাপে রেখেছিলেন মেসিরা। 

আর্জেন্টিনার সবচেয়ে দুর্বল জায়গা মনে করা হচ্ছে তাদের মিডফিল্ড। ডি পল, অ্যালিস্টার ও পারদেসদের নিয়ে মিডফিল্ড খারাপ নয়। তবে মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ন্ত্রণ করা ও সৃজনশীলতা দেখানোয় পিছিয়ে ছিল দলটি।

২১ বছর বয়সী এনজো ফার্নান্দেজ ওই জায়গায় এসে মিডফিল্ড বদলে দিয়েছেন। ডাচদের বিপক্ষে ১২০ মিনিটের খেলায় পুরোটা খেলেছেন ওই তরুণ। ম্যাচের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়ও ছিলেন তিনি। ক্রোয়াট-আলবিসেলেস্তেদের মধ্যে সেমির লড়াই তাই জমবে।

ঢাকা, ১৪ ডিসেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএল


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ