
খুলনা লাইভ: এলাকা মাতালেন। তাক লাগিয়ে দিলেন গোটা জেলাজুড়ে। আবারো প্রমাণ করলেন আমরাও পারি। তার মেধা আর মননের প্রশংসা করেছেন এলাকাবাসী। সরকারী সহযোগিতা পেলে মিন্টু আরো ভাল কিছু উপহার দেবে দেশকে। অনটনের সংসারে থেকেও তার অদম্য আগ্রহের যেন কমতি নেই। সাহস আর হিম্মত নিয়ে আরো ভাল কিছু করতে চান তিনি। কলেজছাত্র মিন্টু সরদার উড়োজাহাজ তৈরি করে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। তাঁর তৈরি করা বিমানটি আকাশে উড়তে পারে। এটা দেখতে প্রতিদিন ভিড় করেন আশপাশের গ্রামের অনেক মানুষ। মিন্টুর প্রতিভা দেখে বিস্মিত তাঁরা।
খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার শোভনা গ্রামের দিনমজুর দেবপ্রসাদ মণ্ডলের বড় ছেলে মিন্টু। তিনি নগরীর বিএল কলেজের গণিত অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। সপ্তম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় মাটি কাটার গাড়ি এবং অষ্টম শ্রেণিতে পানি সেচের পাম্প তৈরি করে ডুমুরিয়া উপজেলার বিজ্ঞান মেলায় অংশ নেন। পরে বিজ্ঞানমনস্ক মিন্টু কলেজে পড়ার সময় টেলিভিশনে বিমান তৈরির একটা খবর দেখে বিমান তৈরির ইচ্ছা পোষণ করেন। কিন্তু অভাব-অনটনের সংসারে টাকা জোগাড় করতে পারছিলেন না।
তারপরও থেমে যাননি মিন্টু।
মা-বাবার দেওয়া কিছু টাকা এবং বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ধারদেনা করে বিমান তৈরির চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। নিজে কখনও বিমানে চড়তে না পারলেও ইন্টারনেট ঘেঁটে ঘেঁটে তিনি প্রথমবার ককশিট দিয়ে উড়োজাহাজের অবয়ব তৈরি করেন। তবে তা ওড়াতে পারেননি। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় বিমান আকাশে উড়লেও নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হন। অবশেষে গত ১৫ ডিসেম্বর স্বপ্নবাজ মিন্টু তাঁর এলাকার ইউপি চেয়ারম্যানসহ অসংখ্য মানুষের সামনে নিজের তৈরি বিমানটি সফলভাবে বেশ কয়েক মিনিট ধরে আকাশে উড়িয়ে দেখান।
মিন্টুদের সাতজনের একান্ন পরিবার। একটি মাত্র মাটির দেয়ালে টিনের ছাউনি দেওয়া ঘরে ঠাকুরদা-ঠাকুরমা, বাবা-মা, ছোট কাকা ও মিন্টুরা দুই ভাই মিলে বসবাস করেন। এত অভাবের মধ্যে বাস করা ছেলেটি বিমান তৈরির মতো বড় স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলায় এলাকাবাসীর মুখে মুখে আলোচনা ছড়িয়ে পড়েছে। মিন্টু জানান, তাঁর বিমানটি বাংলাদেশ বিমানের আদলে তৈরি করেছেন। ককশিটে তৈরি মূল বিমানটির দৈর্ঘ্য ৬৬ ইঞ্চি। আর দু'পাশের ডানা ৬৫ ইঞ্চি লম্বা। ওজন দেড় কেজি।
এই বিমানে ৯৪০ গ্রাম ওজনের দুটি ড্রোন মোটর ব্যবহার করা হয়েছে। রিচার্জেবল লিপো ব্যাটারির শক্তিতে চালিত বিমানটি রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বিমানটি তিন কেজি ওজন বহন করতে পারে। তিনি জানান, বিমান তৈরিতে এ পর্যন্ত তাঁর ২৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বিমানটি আকাশে টানা সাত মিনিট এবং দেড় কিলোমিটার উড়তে পারে। তবে রেঞ্জ আরও বাড়ানো সম্ভব। খুব শিগগির ককশিটের পরিবর্তে ডেফরন বোর্ড দিয়ে বিমানের বডি তৈরি করবেন। তিনি বলেন, টাকা জোগাড় হলে বিমানটিতে দু-তিনজন মানুষ নিয়ে চলাচলের উপযোগী করে তৈরি করবেন।
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে চীন ও আমেরিকার মতো উন্নত প্রযুক্তির মনুষ্যবিহীন বিমান বানাতে চান তিনি। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, অনেকেই এ ধরনের বিমান তৈরি করে। কিন্তু দেখা যায়, বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে তারা আর সামনে অগ্রসর হতে পারে না। ওই ছাত্র যদি আরও ভালো কিছু করতে চায় এবং তাঁদের সহযোগিতা চায়, তাহলে তাকে ল্যাব সহযোগিতাসহ পরামর্শ দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে শোভনা গ্রামের বাসিন্দা গৌতম বিশ্বাস বলেন, মিন্টুর তৈরি বিমান উড়তে দেখে গ্রামের সবাই খুব খুশি। শোভনা ইউপি চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত বৈদ্য বলেন, অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী মিন্টু একটা বড় অবিস্কার করে এলাকার মুখ উজ্জ্বল করেছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সে আরও বড় কিছু করে দেখাতে পারবে। ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ আসিফ রহমান বলেন, বিমান তৈরি কোনো সহজ বিষয় নয়। ছেলেটি অসাধারণ কাজ করেছে। তিনি তার সঙ্গে কথা বলে তাকে সহায়তা করার চেষ্টা করবেন। তিনি বলেন আমাদের সাধ্যমত আমরা তাকে সব ধরনের সহায়তা করতে আগ্রহী।
ঢাকা, ৩০ ডিসেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিআইটি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: